উপক্রম
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে, কহে, জোড় করি কর, গৌড় সুভাজনে;— সেই আমি, ডুবি পূর্বে ভারত-সাগরে, তুলিল যে তিলোত্তমা-মুকুতা যৌবনে;— কবি-গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তৎপরে, গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে, নাশিলা সুমিত্রা-পুত্র, লঙ্কার সমরে, দেব-দৈত্য-নরাতঙ্ক— রক্ষেন্দ্র-নন্দনে; কল্পনা দূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজ-ধামে শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি, (বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে;)— বিরহ-লেখন পরে লিখিল লেখনী যার, বীর জায়া-পক্ষে বীর পতি-গ্রামে, সেই আমি, শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি!—
(Untitled)
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
ইতালি, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন, বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে, সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ, বাসন্ত আমোদে আমোদ মন পূরি নিরন্তরে;— সে দেশে জনম পূর্বে করিলা গ্রহণ ফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা কবি; বাক্দেবীর বরে বড়ই যশস্বী সাধু, কবি-কুল-ধন, রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে। কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি, স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণে কবীন্দ্র: প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী (মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে। ভারতে ভারতী-পদ উপযুক্ত গণি, উপহাররূপে আজি অরপি রতনে॥
বঙ্গভাষা
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;— তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি। অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ, মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;— কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন! স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে— “ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি, এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি? যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!” পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥
কমলে কামিনী
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে কালিদহে। বসি বামা শতদল-দলে (নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে মনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনে গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে, বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে!— কার না ভোলে রে মনঃ, এহেন ছলনে! কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ, ধন্য তুমি বঙ্গভূমে! যশঃ-সুধাদানে অমর করিলা তোমা অমরকারিণী বাগ্দেবী! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ, এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?— বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী॥
যশের মন্দির
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
সুবর্ণ-দেউল আমি দেখিনু স্বপনে অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে, বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে, বহুবিধ রোধে রুদ্ধ উর্দ্ধগামী জনে! তবুও উঠিতে তথা— সে দুর্গম স্থলে— করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে বহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকেলে, না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে। ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে।— শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী, মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে? যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি, অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”
কবি
চতুর্দশপদী
চতুর্দশপদী
কে কবি— কবে কে মোরে? ঘটকালি করি, শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন, সেই কি সে যম-দমী? তার শিরোপরি শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন? সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন, অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ। আনন্দ, আক্ষেপ ক্রোধ, যার আজ্ঞা মানে অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে; নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে; মরুভূমে— তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে!