Generated on: Fri Dec 19 2014

Home

::

Show All

::

Show Current

::

Scroll TOC Up| Down

Send a Comment

২৪১
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
          ওরে  ভীরু, তোমার  হাতে নাই  ভুবনের ভার।
          হালের  কাছে মাঝি আছে , করবে নদী  পার॥
          তুফান  যদি এসে থাকে  তোমার কিসের  দায়—
          চেয়ে  দেখো ঢেউয়ের  খেলা, কাজ কী  ভাবনায়?
          আসুক-নাকো  গহন রাতি, হোক-না  অন্ধকার—
          হালের  কাছে মাঝি আছে , করবে নদী  পার॥
          পশ্চিমে  তুই তাকিয়ে  দেখিস মেঘে  আকাশ ডোবা,
          আনন্দে  তুই পুবের  দিকে দেখ্‌-না  তারার শোভা।
          সাথি  যারা আছে তারা  তোমার আপন  ব’লে
          ভাবো  কি তাই রক্ষা  পাবে তোমারি  ওই কোলে?
          উঠবে  রে ঝড়, দুলবে  রে বুক, জাগবে  হাহাকার—
          হালের  কাছে মাঝি আছে , করবে তরী  পার॥
    
২৪২
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪২


      ওই )    আলো যে   যায় রে  দেখা—
          হৃদয়ের   পুব-গগনে   সোনার  রেখা॥
      এবারে    ঘুচল কি  ভয়,   এবারে   হবে কি  জয়?
          আকাশে   হল কি  ক্ষয় কালীর  লেখা?।
             
কারে ওই      যায় গো দেখা,
          হৃদয়ের     সাগরতীরে     দাঁড়ায়  একা।
      ওরে  তুই   সকল ভুলে   চেয়ে  থাক্‌   নয়ন তুলে—
          নীরবে  চরণমূলে   মাথা   ঠেকা॥
    
২৪৩
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৩


     তোমার  দ্বারে কেন  আসি ভুলেই যে  যাই,   কতই  কী চাই—
           দিনের  শেষে ঘরে এসে  লজ্জা যে  পাই॥
       সে-সব  চাওয়া সুখে  দুখে    ভেসে বেড়ায়  কেবল মুখে,
                    গভীর বুকে
           যে  চাওয়াটি গোপন  তাহার কথা যে  নাই॥
           বাসনা  সব বাঁধন যেন  কুঁড়ির গায়ে—
           ফেটে  যাবে, ঝরে  যাবে দখিন-বায়ে।
     একটি  চাওয়া ভিতর  হতে     ফুটবে তোমার  ভোর-আলোতে
                    প্রাণের স্রোতে—
             অন্তরে  সেই গভীর আশা  বয়ে বেড়াই॥
    
২৪৪
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৪

          তুমি  জানো, ওগো  অন্তর্যামী,
          পথে  পথেই মন  ফিরালেম  আমি॥
              ভাবনা  আমার বাঁধল  নাকো বাসা,
              কেবল  তাদের  স্রোতের ’পরেই  ভাসা—
              তবু  আমার মনে আছে  আশা,
                 তোমার পায়ে ঠেকবে তারা স্বামী॥
          টেনেছিল  কতই  কান্নাহাসি,
          বারে  বারেই ছিন্ন  হল ফাঁসি।
              শুধায়  সবাই হতভাগ্য  ব’লে,
              ‘মাথা  কোথায় রাখবি  সন্ধ্যা হলে।’
              জানি  জানি নামবে  তোমার কোলে
                 আপনি যেথায় পড়বে মাথা নামি॥
    
২৪৫
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৫

      তোমার  দুয়ার খোলার  ধ্বনি ওই গো  বাজে   হৃদয়মাঝে॥
      তোমার  ঘরে নিশি-ভোরে   আগল যদি  গেল সরে
            আমার  ঘরে রইব তবে  কিসের লাজে॥
            অনেক  কথা বলেছি, সে  মিথ্যা বলা।
            অনেক  চলা চলেছি, সে  মিথ্যা চলা।
      আজ যেন  সব পথের শেষে     তোমার  দ্বারে দাঁড়াই  এসে—
            ভুলিয়ে  যেন নেয় না  মোরে আপন কাজে॥
    
২৪৬
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৬

         আমার   যে আসে  কাছে, যে যায় চলে দূরে,
         কভু    পাই বা  কভু না পাই যে  বন্ধুরে,
         যেন    এই  কথাটি বাজে  মনের সুরে—
                  তুমি আমার কাছে এসেছ॥
         কভু    মধুর  রসে ভরে  হৃদয়খানি,
         কভু    নিঠুর  বাজে  প্রিয়মুখের  বাণী,
         তবু    নিত্য  যেন এই কথাটি  জানি—
                  তুমি স্নেহের হাসি হেসেছ॥
         ওগো,   কভু  সুখের কভু  দুখের দোলে
         মোর    জীবন  জুড়ে কত তুফান  তোলে,
         যেন    চিত্ত  আমার এই কথা  না ভোলে—
                  তুমি আমায় ভালোবেসেছ।
         যবে    মরণ আসে নিশীথে  গৃহদ্বারে
         যবে     পরিচিতের  কোল হতে সে  কাড়ে,
         যেন    জানি গো  সেই অজানা  পারাবারে
                  এক তরীতে তুমিও ভেসেছ॥
    
২৪৭
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৭
             হার-মানা  হার পরাব  তোমার গলে—
             দূরে  রব কত আপন  বলের ছলে॥
                জানি আমি জানি ভেসে যাবে অভিমান—
                নিবিড় ব্যথায় ফাটিয়া পড়িবে প্রাণ,
                শূন্য হিয়ার বাঁশিতে বাজিবে গান,
                    পাষাণ তখন গলিবে নয়নজলে॥
             শতদলদল খুলে যাবে থরে  থরে,
             লুকানো রবে না মধু  চিরদিন-তরে।
                আকাশ জুড়িয়া চাহিবে কাহার আঁখি,
                ঘরের বাহিরে নীরবে লইবে ডাকি,
                কিছুই সেদিন কিছুই রবে না বাকি—
                    পরম মরণ লভিব চরণতলে॥
    
২৪৮
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৮

          আছে দুঃখ,  আছে মৃত্যু, বিরহদহন  লাগে।
           তবুও  শান্তি, তবু  আনন্দ, তবু  অনন্ত জাগে॥
         তবু  প্রাণ  নিত্যধারা,    হাসে  সূর্য চন্দ্র  তারা,
             বসন্ত  নিকুঞ্জে আসে  বিচিত্র  রাগে॥
             তরঙ্গ  মিলায়ে যায় তরঙ্গ  উঠে,
             কুসুম  ঝরিয়া পড়ে  কুসুম ফুটে।
         নাহি  ক্ষয়, নাহি  শেষ,   নাহি  নাহি  দৈন্যলেশ—
             সেই  পূর্ণতার  পায়ে মন স্থান  মাগে॥
    
২৪৯
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৪৯

               অন্তরে  জাগিছ  অন্তরযামী।
               তবু  সদা দূরে  ভ্রমিতেছি আমি॥
               সংসারসুখ  করেছি বরণ,
               তবু  তুমি মম  জীবনস্বামী॥
               না  জানিয়া পথ  ভ্রমিতেছি  পথে
               আপন  গরবে অসীম  জগতে।
               তবু  স্নেহনেত্র  জাগে  ধ্রুবতারা,
               তব  শুভ আশিস  আসিছে নামি॥
    
২৫০
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৫০

        দীর্ঘ  জীবনপথ, কত দুঃখতাপ,  কত শোকদহন—
          গেয়ে  চলি তবু তাঁর  করুণার গান॥
        খুলে  রেখেছেন  তাঁর    অমৃতভবনদ্বার—
        শ্রান্তি  ঘুচিবে, অশ্রু  মুছিবে, এ  পথের হবে  অবসান॥
        অনন্তের  পানে চাহি    আনন্দের গান  গাহি—
          ক্ষুদ্র  শোকতাপ নাহি  নাহি রে।
        অনন্ত  আলয় যার    কিসের ভাবনা  তার—
          নিমেষের  তুচ্ছ ভারে হব  না রে  ম্রিয়মাণ॥
    
২৫১
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৫১

     আজি     কোন্‌  ধন হতে বিশ্বে  আমারে
                            কোন্‌ জনে করে বঞ্চিত,
     তব      চরণ-কমল-রতন-রেণুকা
                            অন্তরে আছে সঞ্চিত॥
     কত      নিঠুর  কঠোর দরশে  ঘরষে  মর্মমাঝারে  শল্য বরষে,
             তবু  প্রাণ মন  পীযূষপরশে  পলে পলে  পুলকাঞ্চিত॥
     আজি     কিসের  পিপাসা মিটিল  না ওগো
                            পরম পরানবল্লভ!
     চিতে      চিরসুধা করে  সঞ্চার তব
                            সকরুণ করপল্লব।
     নাথ,      যার  যাহা আছে তার  তাই থাক্‌, আমি  থাকি  চিরলাঞ্ছিত—
     শুধু      তুমি এ  জীবনে নয়নে  নয়নে থাকো থাকো  চিরবাঞ্ছিত॥
    
২৫২
পূজা - আশ্বাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৫২

                কে  যায় অমৃতধামযাত্রী !
           আজি এ  গহন  তিমিররাত্রি,
                 কাঁপে  নভ জয়গানে॥
           আনন্দরব  শ্রবণে লাগে,  সুপ্ত  হৃদয় চমকি  জাগে,
                 চাহি  দেখে  পথপানে॥
     ওগো  রহো রহো, মোরে  ডাকি লহো, কহো  আশ্বাসবাণী।
           যাব  অহরহ সাথে  সাথে
                 সুখে  দুখে শোকে  দিবসে রাতে
                     অপরাজিত প্রাণে॥