Generated on: Fri Dec 19 2014

Home

::

Show All

::

Show Current

::

Scroll TOC Up| Down

Send a Comment

২৬৪
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৪

           শুভ্র  নব শঙ্খ তব  গগন ভরি বাজে,
               ধ্বনিল  শুভ  জাগরণগীত।
           অরুণরুচি  আসনে চরণ তব  রাজে,
               মম  হৃদয়কমল  বিকশিত॥
           গ্রহণ  কর’ তারে  তিমিরপরপারে,
               বিমলতর  পুণ্যকরপরশ-হরষিত॥
    
২৬৫
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৫

                     পূর্বগগনভাগে
                  দীপ্ত হইল সুপ্রভাত
                     তরুণারুণরাগে।
             শুভ্র  শুভ মুহূর্ত  আজি সার্থক  কর’ রে,
                   অমৃতে ভর’ রে—
                  অমিতপুণ্যভাগী কে
                   জাগে কে জাগে॥
    
২৬৬
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৬


     মন,   জাগ’  মঙ্গললোকে  অমল অমৃতময় নব  আলোকে
              জ্যোতিবিভাসিত  চোখে॥
          হের’  গগন ভরি জাগে  সুন্দর, জাগে তরঙ্গে  জীবনসাগর—
          নির্মল  প্রাতে   বিশ্বের সাথে  জাগ’ অভয়  অশোকে॥
    
২৬৭
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৭

       ভোরের  বেলা কখন এসে  পরশ করে  গেছ হেসে॥
       আমার  ঘুমের দুয়ার  ঠেলে   কে সেই খবর  দিল মেলে—
       জেগে  দেখি আমার  আঁখি আঁখির  জলে গেছে  ভেসে॥
       মনে হল  আকাশ যেন কইল  কথা কানে  কানে।
       মনে হল  সকল দেহ পূর্ণ  হল গানে গানে।
       হৃদয়  যেন শিশিরনত  ফুটল  পূজার ফুলের মতো—
       জীবননদী  কূল ছাপিয়ে  ছড়িয়ে গেল  অসীমদেশে॥
    
২৬৮
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৮

    এখনো ঘোর ভাঙে না তোর যে,  মেলে না তোর আঁখি—
    কাঁটার বনে ফুল ফুটেছে রে   জানিস নে তুই তা কি?
    ওরে অলস,  জানিস নে তুই তা কি?
    জাগো এবার জাগো,   বেলা কাটাস না গো॥
    কঠিন পথের শেষে   কোথায়   অগম বিজন দেশে
    ও সেই  বন্ধু আমার একলা আছে গো,  দিস্‌ নে তারে ফাঁকি॥
    প্রখর রবির তাপে   না হয়   শুষ্ক গগন কাঁপে,
    নাহয়    দগ্ধ বালু তপ্ত আঁচলে  দিক চারি দিক ঢাকি—
    পিপাসাতে    দিক চারি দিক ঢাকি।
    মনের মাঝে চাহি  দেখ্‌ রে   আনন্দ কি নাহি।
    পথে  পায়ে পায়ে দুখের বাঁশরি   বাজবে তোরে ডাকি—
    মধুর সুরে   বাজবে তোরে ডাকি॥
    
২৬৯
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৬৯

      আজি   নির্ভয়নিদ্রিত ভুবনে জাগে, কে জাগে?
      ঘন    সৌরভমন্থর পবনে জাগে, কে জাগে?।
      কত   নীরব বিহঙ্গকুলায়ে
            মোহন অঙ্গুলি বুলায়ে— জাগে, কে জাগে?
      কত   অস্ফুট পুষ্পের গোপনে জাগে, কে জাগে?
      এই    অপার অম্বরপাথারে
            স্তম্ভিত গম্ভীর আঁধারে—জাগে, কে জাগে?
      মম    গভীর অন্তরবেদনে জাগে, কে জাগে?।
    
২৭০
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭০

         ভোর হল বিভাবরী, পথ হল অবসান—
         শুন ওই লোকে লোকে উঠে আলোকেরই গান॥
         ধন্য হলি ওরে পান্থ   রজনীজাগরক্লান্ত,
         ধন্য হল মরি মরি ধুলায় ধূসর প্রাণ॥
         বনের কোলের কাছে  সমীরণ জাগিয়াছে,
         মধুভিক্ষু সারে সারে  আগত কুঞ্জের দ্বারে।
         হল তব যাত্রা সারা,  মোছো মোছো অশ্রুধারা
         লজ্জা ভয় গেল ঝরি, ঘুচিল রে অভিমান॥
    
২৭১
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭১

   নিশার স্বপন ছুটল রে, এই ছুটল রে,  টুটল বাঁধন টুটল রে॥
   রইল না আর আড়াল প্রাণে,  বেরিয়ে এলেম জগৎ-পানে—
     হৃদয়শতদলের সকল দলগুলি এই ফুটল রে এই ফুটল রে॥
   দুয়ার আমার ভেঙে শেষে  দাঁড়ালে যেই আপনি এসে
     নয়নজলে ভেসে হৃদয় চরণতলে লুটল রে।
   আকাশ হতে প্রভাত-আলো  আমার পানে হাত বাড়ালো,
     ভাঙা কারার দ্বারে আমার জয়ধ্বনি উঠল রে এই উঠল রে॥
    
২৭২
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭২

         অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
         মৌনবীণার তন্ত্র আমার জাগাও সুধারবে॥
           বসন্তসমীরে তোমার ফুল-ফুটানো বাণী
               দিক পরানে আনি—
           ডাকো তোমার নিখিল-উৎসবে॥
                   মিলনশতদলে
         তোমার প্রেমের অরূপ মূর্তি দেখাও ভুবনতলে।
         সবার সাথে মিলাও আমায়, ভুলাও অহঙ্কার,
                   খুলাও রুদ্ধদ্বার—
               পূর্ণ করো প্রণতিগৌরবে॥
    
২৭৩
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৩

        হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানে
        জীবন আমার উঠুক বিকাশি তোমার পানে॥
    তোমার বাণীতে সীমাহীন আশা, চিরদিবসের প্রাণময়ী ভাষা—
       ক্ষয়হীন ধন ভরি দেয় মন তোমার হাতের দানে॥
          এ শুভলগনে জাগুক গগনে অমৃতবায়ু,
          আনুক জীবনে নবজনমের অমল আয়ু।
    জীর্ণ যা-কিছু যাহা-কিছু ক্ষীণ নবীনের মাঝে হোক তা বিলীন—
              ধুয়ে যাক যত পুরানো মলিন
                   নব-আলোকের স্নানে॥
    
২৭৪
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৪

            প্রাণের প্রাণ জাগিছে তোমারি প্রাণে,
                অলস রে, ওরে, জাগো জাগো॥
            শোনো রে চিত্তভবনে অনাদি শঙ্খ বাজিছে—
                অলস রে, ওরে, জাগো জাগো॥
    
২৭৫
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৫

          জাগো নির্মল নেত্রে  রাত্রির পরপারে,
          জাগো অন্তরক্ষেত্রে  মুক্তির অধিকারে॥
          জাগো ভক্তির তীর্থে  পূজাপুষ্পের ঘ্রাণে,
          জাগো উন্মুখচিত্তে,  জাগো অম্লানপ্রাণে,
          জাগো নন্দননৃত্যে  সুধাসিন্ধুর ধারে,
          জাগো স্বার্থের প্রান্তে  প্রেমমন্দিরদ্বারে॥
          জাগো ঊজ্জ্বল পুণ্যে,  জাগো নিশ্চল আশে,
          জাগো নিঃসীম শূন্যে   পূর্ণের বাহুপাশে।
          জাগো নির্ভয়ধামে,  জাগো সংগ্রামসাজে,
          জাগো ব্রহ্মের নামে,  জাগো কল্যাণকাজে,
          জাগো দুর্গমযাত্রী   দুঃখের অভিসারে,
          জাগো স্বার্থের প্রান্তে  প্রেমমন্দিরদ্বারে॥
    
২৭৬
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৬

             স্বপন যদি ভাঙিলে রজনীপ্রভাতে
             পূর্ণ করো হিয়া মঙ্গলকিরণে॥
               রাখো মোরে তব কাজে,
               নবীন করো এ জীবন হে॥
            খুলি মোর গৃহদ্বার  ডাকো তোমারি ভবনে হে॥
    
২৭৭
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৭

          বাজাও তুমি, কবি, তোমার সঙ্গীত সুমধুর
              গম্ভীরতর তানে প্রাণে মম—
          দ্রব জীবন ঝরিবে ঝর ঝর নির্ঝর তব পায়ে॥
          বিসরিব সব সুখ-দুখ, চিন্তা, অতৃপ্ত বাসনা—
          বিচরিবে বিমুক্ত হৃদয় বিপুল বিশ্ব-মাঝে
               অনুখন আনন্দবায়ে॥
    
২৭৮
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৮

             মনোমোহন, গহন যামিনীশেষে
                 দিলে আমারে জাগায়ে॥
             মেলিদিলে শুভপ্রাতে সুপ্ত এ আঁখি
                 শুভ্র আলোক লাগায়ে॥
             মিথ্যা স্বপনরাজি কোথা মিলাইল,
                 আঁধার গেল মিলায়ে।
             শান্তিসরসী-মাঝে চিত্তকমল
                 ফুটিল আনন্দবায়ে॥
    
২৭৯
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৭৯

            পান্থ, এখনো কেন অলসিত অঙ্গ—
            হেরো, পুষ্পবনে জাগে বিহঙ্গ॥
            গগন মগন নন্দন-আলোক উল্লাসে,
            লোকে লোকে উঠে প্রাণতরঙ্গ॥
            রুদ্ধ হৃদয়কক্ষে তিমিরে
            কেন আত্মসুখদুঃখে শয়ান—
            জাগো জাগো, চলো মঙ্গলপথে
            যাত্রীদলে মিলি লহো বিশ্বের সঙ্গ॥
    
২৮০
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮০

            দুঃখরাতে, হে নাথ, কে ডাকিলে—
            জাগি হেরিনু তব প্রেমমুখছবি॥
            হেরিনু ঊষালোকে বিশ্ব তব কোলে,
            জাগে তব নয়নে প্রাতে শুভ্র রবি॥
            শুনিনু বনে উপবনে আনন্দগাথা,
            আশা হৃদয়ে বহি নিত্য গাহে কবি॥
    
২৮২
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮২

         হরষে জাগো আজি, জাগো রে তাঁহার সাথে,
          প্রীতিযোগে তাঁর সাথে একাকী॥
         গগনে গগনে হেরো দিব্য নয়নে
          কোন্‌ মহাপুরুষ জাগে মহাযোগাসনে—
            নিখিল কালে জড়ে জীবে জগতে
                দেহে প্রাণে হৃদয়ে॥
    
২৮৩
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৩

                 বিমল আনন্দে জাগো রে।
                 মগন হও সুধাসাগরে॥
             হৃদয়-উদয়াচলে  দেখো রে চাহি
                 প্রথম পরম জ্যোতিরাগ রে॥
    
২৮৪
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৪

                 সবে আনন্দ করো
           প্রিয়তম নাথে লয়ে যতনে হৃদয়ধামে॥
           সঙ্গীতধ্বনি জাগাও জগতে প্রভাতে,
           স্তব্ধ গগন পূর্ণ করো ব্রহ্মনামে॥
    
২৮৫
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৫

        তুমি আপনি জাগাও মোরে তব সুধাপরশে—
        হৃদয়নাথ, তিমিররজনী-অবসানে হেরি তোমারে।
        ধীরে ধীরে বিকাশো হৃদয়গগনে বিমল তব মুখভাতি॥
    
২৮৬
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৬

           নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা, আজি সুপ্রভাতে॥
           বিষাদ সব করো দূর নবীন আনন্দে,
           প্রাচীন রজনী নাশো নূতন ঊষালোকে॥
    
২৮৭
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৭

          শোনো তাঁর সুধাবাণী শুভমুহূর্তে শান্তপ্রাণে—
          ছাড়ো ছাড়ো কোলাহল, ছাড়ো রে আপন কথা॥
          আকাশে দিবানিশি উথলে সঙ্গীতধ্বনি তাঁহার,
                কে শুনে সে মধুবীণারব—
             অধীর বিশ্ব শূন্যপথে হল বাহির॥
    
২৮৮
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৮

               নিশিদিন চাহো রে তাঁর পানে।
               বিকশিবে প্রাণ তাঁর গুণগানে॥
               হেরো রে অন্তরে সে মুখ সুন্দর,
               ভোলো দুঃখ তাঁর প্রেমমধুপানে॥
    
২৮৯
পূজা - জাগরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ২৮৯

       ওঠো ওঠো রে— বিফলে প্রভাত বহে যায় যে।
       মেলো আঁখি, জাগো জাগো,  থেকো না রে অচেতন॥
       সকলেই তাঁর কাজে   ধাইল জগতমাঝে,
       জাগিল প্রভাতবায়ু,  ভানু ধাইল আকাশপথে॥
       একে একে নাম ধরে ডাকিছেন বুঝি প্রভু—
       একে একে ফুলগুলি তাই  ফুটিয়া উঠিছে বনে।
       শুন সে আহ্বানবাণী,   চাহো সেই মুখপানে—
             তাঁহার আশিস লয়ে
                  চলো রে যাই সবে তাঁর কাজে॥