Generated on: Fri Dec 19 2014

Home

::

Show All

::

Show Current

::

Scroll TOC Up| Down

Send a Comment

৩০৯
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩০৯

           আনন্দগান উঠুক তবে বাজি
               এবার আমার ব্যথার বাঁশিতে।
           অশ্রুজলের ঢেউয়ের ’পরে আজি
               পারের তরী থাকুক ভাসিতে॥
           যাবার হাওয়া ওই-যে উঠেছে, ওগো, ওই-যে উঠেছে,
           সারারত্রি চক্ষে আমার ঘুম যে ছুটেছে।
           হৃদয় আমার উঠছে দুলে দুলে
               অকূল জলের অট্টহাসিতে—
           কে গো তুমি দাও দেখি তান তুলে
               এবার আমার ব্যথার বাঁশিতে॥
           হে অজানা, অজানা সুর নব
               বাজাও আমার ব্যথার বাঁশিতে,
           হঠাৎ এবার উজান হাওয়ায় তব
               পারের তরী থাক্‌-না ভাসিতে।
           কোনো কালে হয় নি যারে দেখা, ওগো, তারি বিরহে
           এমন করে ডাক দিয়েছে— ঘরে কে রহে!
           বাসার আশা গিয়েছে মোর ঘুরে,
               ঝাঁপ দিয়েছি আকাশরাশিতে।
           পাগল, তোমার সৃষ্টিছাড়া সুরে
               তান দিয়ো মোর ব্যথার বাঁশিতে॥
    
৩১০
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১০

        এ দিন আজি কোন্‌ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার?
        আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার?।
      কাহার অভিষেকের তরে  সোনার ঘটে আলোক ভরে,
        ঊষা কাহার আশিস বহি হল আঁধার পার?।
        বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা—
        কার হৃদয়ের মাঝে হল তাদের মালা গাঁথা?
      বহু যুগের উপহারে   বরণ করি নিল কারে,
        কার জীবনে প্রভাত আজি ঘুচায় অন্ধকার।
    
৩১১
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১১

     ওই  অমল হাতে  রজনী প্রাতে  আপনি জ্বালো
         এই তো আলো—  এই তো আলো॥
     এই তো প্রভাত, এই তো আকাশ,   এই তো পূজার পুষ্পবিকাশ,
          এই তো বিমল, এই তো মধুর,   এই তো ভালো—
              এই তো আলো— এই তো আলো॥
          আঁধার মেঘের বক্ষে জেগে আপনি জ্বালো
              এই তো আলো— এই তো আলো।
          এই তো ঝঞ্ঝা তড়িৎ-জ্বালা,  এই তো দুখের অগ্নিমালা,
          এই তো মুক্তি, এই তো দীপ্তি,  এই তো ভালো—
              এই তো আলো— এই তো আলো॥
    
৩১২
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১২

       তার    অন্ত নাই গো যে আনন্দে গড়া আমার অঙ্গ।
       তার    অণু-পরমাণু পেল কত আলোর সঙ্গ,
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই।
       তারে   মোহনমন্ত্র দিয়ে গেছে কত ফুলের গন্ধ
       তারে   দোলা দিয়ে দুলিয়ে গেছে কত ঢেউয়ের ছন্দ,
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই।
       আছে   কত সুরের সোহাগ যে তার স্তরে স্তরে লগ্ন,
       সে যে  কত রঙের রসধারায় কতই হল মগ্ন,
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই।
       কত    শুকতারা যে স্বপ্নে তাহার রেখে গেছে স্পর্শ,
       কত    বসন্ত যে ঢেলেছে তায় অকারণের হর্ষ,
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই।
       সে যে  প্রাণ পেয়েছে পান করে যুগ-যুগান্তরের স্তন্য—
       ভুবন   কত তীর্থজলের ধারায় করেছে তায় ধন্য,
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই।
       সে যে  সঙ্গিনী মোর, আমারে সে দিয়েছে বরমাল্য।
       আমি    ধন্য, সে মোর অঙ্গনে যে কত প্রদীপ জ্বালল—
               ও তার  অন্ত নাই গো নাই॥

    
৩১৩
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৩

   তোমার   আনন্দ ওই এল দ্বারে এল এল এল গো।  ওগো পুরবাসী!
   বুকের    আঁচলখানি ধুলায় পেতে আঙিনাতে মেলো গো॥
   পথে     সেচন কোরো গন্ধবারি  মলিন না হয় চরণ তারি,
   তোমার   সুন্দর ওই এল দ্বারে এল এল এল গো।
   আকুল    হৃদয়খানি সম্মুখে তার ছড়িয়ে ফেলো ফেলো গো॥
   তোমার   সকল ধন যে ধন্য হল হল গো।
           বিশ্বজনের কল্যাণে আজ ঘরের দুয়ার খোলো গো।
   হেরো    রাঙা হল সকল গগন,   চিত্ত হল পুলকমগন,
   তোমার   নিত্য আলো এল দ্বারে এল এল এল গো।
   তোমার   পরানপ্রদীপ তুলে ধোরো, ওই আলোতে জ্বেলো গো॥
    
৩১৪
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৪

               প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে।
               ভয়-ভাবনার বাধা টুটেছে॥
       দুঃখকে আজ কঠিন বলে   জড়িয়ে ধরতে বুকের তলে
               উধাও হয়ে হৃদয় ছুটেছে॥
       হেথায় কারো ঠাঁই হবে না    মনে ছিল এই ভাবনা,
               দুয়ার ভেঙে সবাই জুটেছে।
       যতন করে আপনাকে যে    রেখেছিলেম ধুয়ে মেজে,
               আনন্দে সে ধুলায় লুটেছে॥
    
৩১৫
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৫

        পারবি না কি যোগ দিতে এই ছন্দে রে
        এই    খসে যাবার, ভেসে যাবার, ভাঙবারই আনন্দে রে॥
    পাতিয়া কান শুনিস না যে      দিকে দিকে গগনমাঝে
        মরণবীণায় কী সুর বাজে তপন-তারা-চন্দ্রে রে—
        জ্বালিয়ে আগুন ধেয়ে ধেয়ে জ্বলবারই আনন্দে রে॥
    পাগল-করা গানের তানে    ধায় যে কোথা কেই বা জানে,
        চায় না ফিরে পিছন-পানে, রয় সে বাঁধা বন্ধে রে—
        লুটে যাবার, ছুটে যাবার, চলবারই আনন্দে রে।
    সেই আনদ-চরণ-পাতে       ছয় ঋতু যে নৃত্যে মাতে,
        প্লাবন বহে যায় ধরাতে বরণ-গীতে গন্ধে রে—
        ফেলে দেবার, ছেড়ে দেবার, মরবারই আনন্দে রে॥
    
৩১৬
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৬

       প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে
       প্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোকে ভূলোকে
                তোমার অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া॥
       দিকে দিকে আজি টুটিয়া সকল বন্ধ
       মুরতি ধরিয়া জাগিয়া উঠে আনন্দ,
                জীবন উঠিল নিবিড় সুধায় ভরিয়া॥
       চেতনা আমার কল্যাণরসসরসে
       শতদলসম ফুটিল পরম হরষে
                সব মধু তার চরণে তোমার ধরিয়া।
       নীরব আলোকে জাগিল হৃদয়প্রান্তে
       উদার উষার উদয়-অরুণকান্তি,
                অলস আঁখির আবরণ গেল সরিয়া॥
    
৩১৭
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৭

            জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
            ধন্য হল, ধন্য হল মানবজীবন॥
    নয়ন আমার রূপের পুরে      সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে,
            শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন॥
            তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার, বাজাই আমি বাঁশি—
            গানে গানে গেঁথে বেড়াই প্রাণের কান্না হাসি।
    এখন সময় হয়েছে কি?   সভায় গিয়ে তোমায় দেখি’
            জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব এ মোর নিবেদন॥
    
৩১৮
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৮

           গায়ে আমার পুলক লাগে, চোখে ঘনায় ঘোর—
           হৃদয়ে মোর কে বেঁধেছে রাঙা রাখীর ডোর?।
         আজিকে এই আকাশতলে  জলে স্থলে ফুলে ফলে
           কেমন ক’রে, মনোহরণ, ছড়ালে মন মোর?।
           কেমন খেলা হল আমার আজি তোমার সনে!
           পেয়েছি কি খুঁজে বেড়াই ভেবে না পাই মনে।
         আনন্দ আজ কিসের ছলে  কাঁদিতে চায় নয়নজলে,
           বিরহ আজ মধুর হয়ে করেছে প্রাণ ভোর॥
    
৩১৯
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩১৯

         আলোয় আলোকময় করে হে এলে আলোর আলো।
         আমার নয়ন হতে আঁধার মিলালো মিলালো॥
       সকল আকাশ সকল ধরা  আনন্দে হাসিতে ভরা,
         যে দিক-পানে নয়ন মেলি ভালো সবই ভালো॥
         তোমার আলো গাছের পাতায় নাচিয়ে তোলে প্রাণ।
         তোমার আলো পখির বাসায় জাগিয়ে তোলে গান।
       তোমার আলো ভালোবেসে  পড়েছে মোর গায়ে এসে,
         হৃদয়ে মোর নির্মল হাত বুলালো বুলালো॥
    
৩২০
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২০

          আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা॥
              মন্দ পবেনে আজি ভাসে আকাশে
              বিধুর ব্যাকুল মধুমাধুরী, আহা॥
              স্তব্ধ গগনে গ্রহতারা নীরবে
              কিরণসঙ্গীতে সুধা বরষে, আহা।
          প্রাণ মন মম ধীরে ধীরে প্রসাদরসে আসে ভরি,
              দেহ পুলকিত উদার হরষে, আহা॥

    
৩২১
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২১

              বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে—
              অমলকমল-মাঝে, জ্যোৎস্নারজনী-মাঝে,
              কাজলঘন-মাঝে, নিশি-আঁধার-মাঝে,
              কুসুমসুরভি-মাঝে বীনরণন শুনি যে—
                   প্রেমে প্রেমে বাজে॥
              নাচে নাচে রম্যতালে নাচে—
              তপন তারা নাচে, নদী সমুদ্র নাচে,
              জন্মমরণ নাচে, যুগযুগান্ত নাচে,
              ভকতহৃদয় নাচে বিশ্বছন্দে মাতিয়ে—
                    প্রেমে প্রেমে নাচে॥
              সাজে সাজে রম্যবেশে সাজে—
              নীল অম্বর সাজে, ঊষাসন্ধ্যা সাজে,
              ধরণীধূলি সাজে, দীনদুঃখী সাজে,
              প্রণত চিত্ত সাজে বিশ্বশোভায় লুটায়ে—
                    প্রেমে প্রেমে সাজে॥
    
৩২২
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২২

          বিপুল  তরঙ্গ রে,  বিপুল তরঙ্গ রে।
      সব গগন উদ্‌বেলিয়া, মগন করি অতীত অনাগত
      আলোকে উজ্জ্বল জীবনে-চঞ্চল  একি আনন্দ-তরঙ্গ॥
          তাই, দুলিছে দিনকর চন্দ্র তারা,
          চমকি কম্পিছে চেতনাধারা,
      আকুল চঞ্চল নাচে সংসার,  কুহরে হৃদয়বিহঙ্গ॥
    
৩২৩
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৩

          সদা থাকো আনন্দে, সংসারে নির্ভয়ে নির্মলপ্রাণে॥
          জাগো প্রাতে আনন্দে, করো কর্ম আনন্দে,
          সন্ধ্যায় গৃহে চলো হে আনন্দগানে॥
          সঙ্কটে সম্পদে থাকো কল্যাণে,
          থাকো আনন্দে নিন্দা-অপমানে।
          সবারে ক্ষমা করি থাকো আনন্দে,
          চির-অমৃতনির্ঝরে শান্তিরসপানে॥
    
৩২৪
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৪

          বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা॥
               বাজে অসীম নভমাঝে অনাদি রব,
               জাগে অগণ্য রবিচন্দ্রতারা॥
               একক অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডরাজ্যে
               পরম-এক সেই রাজরাজেন্দ্র রাজে।
               বিস্মিত নিমেষহত   বিশ্ব চরণে বিনত,
               লক্ষশত ভক্তচিত বাক্যহারা॥

    
৩২৫
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৫

    অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া,
    ফিরে না সে কভু ‘আলয় কোথায়’ বলে ধুলায় ধুলায় লুটিয়া॥
           তেমনি সহজে আনন্দে হরষিত
           তোমার মাঝারে রব নিমগ্নচিত,
    পূজাশতদল আপনি সে বিকশিত সব সংশয় টুটিয়া॥
    কোথা আছ তুমি পথ না খুঁজিব কভু,  শুধাব না কোনো পথিকে—
    তোমারি মাঝারে ভ্রমিব ফিরিব প্রভু,   যখন ফিরিব যে দিকে।
           চলিব যখন তোমার আকাশগেহে
           তোমার অমৃতপ্রবাহ লাগিবে দেহে,
    তোমার পবন সখার মতন স্নেহে   বক্ষে আসিবে ছুটিয়া॥
    
৩২৬
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৬

              আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,
         দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে॥
              পান করে রবি শশী অঞ্জলি ভরিয়া—
              সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি—
              নিত্য পূর্ণ ধরা জীবনে কিরণে॥
              বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,
              স্বার্থনিমগন কী কারণে?
              চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
              ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
              প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে॥
    
৩২৭
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৭

         নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণে
         শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে॥
         উৎসারিত নব জীবননির্ঝর, উচ্ছ্বাসিত আশাগীতি,
         অমৃতপুষ্পগন্ধ বহে আজি এই শান্তিপবনে॥
    
৩২৮
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৮

     হেরি তব বিমলমুখভাতি  দূর হল গহন দুখরাতি।
     ফুটিল মন প্রাণ মম তব চরণলালসে,  দিনু হৃদয়কমলদল পাতি॥
     তব নয়নজ্যোতিকণা লাগি  তরুণ রবিকিরণ উঠে জাগি।
     নয়ন খুলি বিশ্বজন বদন তুলি চাহিল  তব দরশপরশসুখ মাগি।
            গগনতল মগন হল শুভ্র তব হাসিতে,
     উঠিল ফুটি কত কুসুমপাঁতি—  হেরি তব বিমলমুখভাতি॥
     ধ্বনিত বন বিহগকলতানে,  গীত সব ধায় তব পানে।
     পূর্বগগনে জগত জাগি উঠি গাহিল,  পূর্ণ সব তব রচিত গানে।
            প্রেমরস পান করি গান করি কাননে
     উঠিল মন প্রাণ মম মাতি—হেরি তব বিমলমুখভাতি॥
    
৩২৯
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩২৯

              এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়,
              জগতপুরবাসী সবে কোথায় ধায়॥
              কোন্‌ অমৃতধনের পেয়েছে সন্ধান,
                 কোন্‌ সুধা করে পান!
              কোন্‌ আলোকে আঁধার দূরে যায়॥
    
৩৩০
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩৩০

      আঁধার রজনী পোহালো,   জগত পূরিল পুলকে।
      বিমল প্রভাতকিরণে      মিলিল দ্যুলোকে ভূলোকে॥
      জগত নয়ন তুলিয়া      হৃদয় দুয়ার খুলিয়া
      হেরিছে হৃদয়নাথেরে      আপন হৃদয়-আলোকে॥
      প্রেমমুখহাসি তাঁহারি      পড়িছে ধরার আননে—
      কুসুম বিকশি উঠিছে,     সমীর বহিছে কাননে।
      সুধীরে আঁধার টুটিছে,    দশ দিক ফুটে উঠিছে—
      জননীর কোলে যেন রে    জাগিছে বালিকা বালকে॥
      জগত যে দিকে চাহিছে    সে দিকে দেখিনু চাহিয়া,
      হেরি সে অসীম মাধুরী     হৃদয় উঠিছে গাহিয়া।
      নবীন আলোকে ভাতিছে,   নবীন আশায় মাতিছে,
      নবীন জীবন লভিয়া        জয়-জয় উঠে ত্রিলোকে॥
    
৩৩১
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                      ৩৩১

    হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল আজি মম পূর্ণ হল,  শুন সবে জগতজনে॥
            কী হেরিনু শোভা, নিখিলভুবননাথ
                চিত্ত-মাঝে বসি স্থির আসনে॥
    
৩৩২
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                       ৩৩২

             ক্ষত যত ক্ষতি যত মিছে হতে মিছে,
             নিমেষের কুশাঙ্কুর পড়ে রবে নীচে॥
         কী হল না, কী পেলে না,  কে তব শোধে নি দেনা,
             সে সকলি মরীচিকা মিলাইবে পিছে॥
             এই-যে হেরিলে চোখে অপরূপ ছবি
             অরুণ গগনতলে প্রভাতের রবি—
         এই তো পরম দান    সফল করিল প্রাণ,
                 সত্যের আনন্দরূপ
                       এই তো জাগিছে॥
         

    
৩৩৩
পূজা - আনন্দ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                     ৩৩৩

   আমি   সংসারে মন দিয়েছিনু, তুমি আপনি সে মন নিয়েছ।
   আমি   সুখ ব’লে দুখ চেয়েছিনু, তুমি দুখ ব’লে সুখ দিয়েছ॥
         হৃদয় যাহার শতখানে ছিল শত স্বার্থের সাধনে
         তাহারে কেমনে কুড়ায়ে আনিলে, বাঁধিলে ভক্তিবাঁধনে॥
         সুখ সুখ করে দ্বারে দ্বারে মোরে কত দিকে কত খোঁজালে,
         তুমি যে আমার কত আপনার এবার সে কথা বোঝালে—
         করুণা তোমার কোন্‌ পথ দিয়ে কোথা নিয়ে যায় কাহারে—
               সহসা দেখিনু নয়ন মেলিয়ে,
                     এনেছ তোমারি দুয়ারে॥