৩৭৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
ভেঙেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়। তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়॥ হে বিজয়ী বীর, নব জীবনের প্রাতে নবীন আশার খড়্গ তোমার হাতে— জীর্ণ আবেশ কাটো সুকঠোর ঘাতে, বন্ধন হোক ক্ষয়॥ এসো দুঃসহ, এসো এসো নির্দয়, তোমারি হউক জয়। এসো নির্মল, এসো এসো নির্ভয়, তোমারি হউক জয়। প্রভাতসূর্য, এসেছ রুদ্রসাজে, দুঃখের পথে তোমার তূর্য বাজে— অরুণবহ্নি জ্বালাও চিত্তমাঝে, মৃত্যুর হোক লয়॥
৩৭৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
হবে জয়, হবে জয়, হবে জয় রে, ওহে বীর, হে নির্ভয়॥ জয়ী প্রাণ, চিরপ্রাণ, জয়ী রে আনন্দগান, জয়ী প্রেম, জয়ী ক্ষেম, জয়ী জ্যোতির্ময় রে॥ এ আঁধার হবে ক্ষয়, হবে ক্ষয় রে, ওহে বীর, হে নির্ভয়। ছাড়ো ঘুম, মেলো চোখ, অবসাদ দূর হোক, আশার অরুণালোক হোক অভ্যুদয় রে॥
৩৭৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
জয় হোক, জয় হোক নব অরুণোদয়। পূর্ব দিগঞ্চল হোক জ্যোতির্ময়॥ এসো অপরাজিত বাণী, অসত্য হানি— অপহত শঙ্কা, অপগত সংশয়॥ এসো নবজাগ্রত প্রাণ, চিরযৌবনজয়গান। এসো মৃত্যুঞ্জয় আশা জড়ত্বনাশা— ত্রন্দন দূর হোক, বন্ধন হোক ক্ষয়॥
৩৭৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি, জয় তোমার করুণা। জয় তব ভীষণ সব-কলুষ-নাশন রুদ্রতা। জয় অমৃত তব, জয় মৃত্যু তব, জয় শোক তব, জয় সান্ত্বনা॥ জয় পূর্ণজাগ্রত জ্যোতি তব, জয় তিমিরনিবিড় নিশীথিনী ভয়দায়িনী। জয় প্রেমমধুময় মিলন তব, জয় অসহ বিচ্ছেদবেদনা॥
৩৭৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
সকলকলুষতামসহর, জয় হোক তব জয়— অমৃতবারি সিঞ্চন কর’ নিখিলভুবনময়— মহাশান্তি, মহাক্ষেম, মহাপুণ্য, মহাপ্রেম॥ জ্ঞানসূর্য-উদয়-ভাতি ধ্বংস করুক তিমিররাতি— দুঃসহ দুঃস্বপ্ন ঘাতি অপগত কর’ ভয়॥ মোহমলিন অতি-দুর্দিন-শঙ্কিত-চিত পান্থ জটিল-গহন-পথসঙ্কট-সংশয়-উদ্ভ্রান্ত। করুণাময়, মাগি শরণ— দুর্গতিভয় করহ হরণ, দাও দুঃখবন্ধতরণ মুক্তির পরিচয়॥
৩৭৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
রাখো রাখো রে জীবনে জীবনবল্লভে, প্রাণমনে ধরি রাখো নিবিড় আনন্দবন্ধনে॥ আলো জ্বালো হৃদয়দীপে অতিনিভৃত অন্তরমাঝে, আকুলিয়া দাও প্রাণ গন্ধচন্দনে॥
৩৭৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
হৃদয়মন্দিরে, প্রাণাধীশ, আছ গোপনে। অমৃতসৌরভে আকুল প্রাণ, হায়, ভ্রমিয়া জগতে না পায় সন্ধান— কে পারে পশিতে আনন্দভবনে তোমার করুণাকিরণ-বিহনে॥
৩৮০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
ওই শুনি যেন চরণধ্বনি রে, শুনি আপন-মনে। বুঝি আমার মনোহরণ আসে গোপনে॥ পাবার আগে কিসের আভাস পাই, চোখের জলের বাঁধ ভেঙেছে তাই গো, মালার গন্ধ এল যারে জানি স্বপনে॥ ফুলের মালা হাতে ফাগুন চেয়ে আছে ওই-যে— তার চলার পথের কাছে ওই-যে। দিগঙ্গনার অঙ্গনে যে আজি ক্ষণে ক্ষণে শঙ্খ ওঠে বাজি, আশার হাওয়া লাগে ওই নিখিল গগনে॥
৩৮১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
বেঁধেছ প্রেমের পাশে ওহে প্রেমময়। তব প্রেম লাগি দিবানিশি জাগি ব্যাকুলহৃদয়॥ তব প্রেমে কুসুম হাসে, তব প্রেমে চাঁদ বিকাশে, প্রেমহাসি তব উষা নব নব, প্রেমে-নিমগন নিখিল নীরব, তব প্রেম-তরে ফিরে হা হা ক’রে উদাসী মলয়॥ আকুল প্রাণ মম ফিরিবে না সংসারে, ভুলেছে তোমারি রূপে নয়ন আমারি। জলে স্থলে গগনতলে তব সুধাবাণী সতত উথলে— শুনিয়া পরান শান্তি না মানে, ছুটে যেতে চায় অনন্তেরই পানে, আকুল হৃদয় খোঁজে বিশ্বময় ও প্রেম-আলয়॥
৩৮২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
দাও হে আমার ভয় ভেঙে দাও। আমার দিকে ও মুখ ফিরাও॥ কাছে থেকে চিনতে নারি, কোন্ দিকে যে কী নেহারি, তুমি আমার হৃদ্বিহারী হৃদয়-পানে হাসিয়া চাও॥ বলো আমায় বলো কথা, গায়ে আমায় পরশ করো। দক্ষিণ হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমায় তুমি তুলে ধরো। যা বুঝি সব ভুল বুঝি হে, যা খুঁজি সব ভুল খুঁজি হে— হাসি মিছে, কান্না মিছে, সামনে এসে এ ভুল ঘুচাও॥
৩৮৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
আর নহে, আর নয়, আমি করি নে আর ভয়। আমার ঘুচল কাঁদন, ফলল সাধন, হল বাঁধন ক্ষয়॥ ওই আকাশে ওই ডাকে, আমায় আর কে ধ’রে রাখে— আমি সকল দুয়ার খুলেছি, আজ যাব সকলময়॥ ওরা ব’সে ব’সে মিছে শুধু মায়াজাল গাঁথিছে— ওরা কী-যে গোনে ঘরের কোণে আমায় ডাকে পিছে। আমার অস্ত্র হল গড়া, আমার বর্ম হল পরা— এবার ছুটবে ঘোড়া পবনবেগে, করবে ভুবন জয়॥
৩৮৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
আরো চাই যে, আরো চাই গো—আরো যে চাই। ভাণ্ডারী যে সুধা আমায় বিতরে নাই॥ সকালবেলার আলোয় ভরা এই-যে আকাশ বসুন্ধরা এরে আমার জীবন-মাঝে কুড়ানো চাই— সকল ধন যে বাইরে আমার, ভিতরে নাই॥ প্রাণের বীণায় আরো আঘাত, আরো যে চাই। গুণীর পরশ পেয়ে সে যে শিহরে নাই। দিনরজনীর বাঁশি পূরে যে গান বাজে অসীম সুরে তারে আমার প্রাণের তারে বাজানো চাই। আপন গান যে দূরে তাহার, নিয়ড়ে নাই॥
৩৮৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
নয়ন ছেড়ে গেলে চলে, এলে সকল-মাঝে— তোমায় আমি হারাই যদি তুমি হারাও না যে॥ ফুরায় যবে মিলনরাতি তবু চির সাথের সাথি ফুরায় না তো তোমায় পাওয়া, এসো স্বপনসাজে॥ তোমার সুধারসের ধারা গহনপথে এসে ব্যথারে মোর মধুর করি নয়নে যায় ভেসে। শ্রবণে মোর নব নব শুনিয়েছিলে যে সুর তব বীণা থেকে বিদায় নিল, চিত্তে আমার বাজে॥
৩৮৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
আরাম-ভাঙা উদাস সুরে আমার বাঁশির শূন্য হৃদয় কে দিল আজ ব্যথায় পূরে॥ বিরামহারা ঘরছাড়াকে ব্যাকুল বাঁশি আপনি ডাকে— ডাকে স্বপন-জাগরণে, কাছের থেকে ডাকে দূরে॥ আমার প্রাণের কোন্ নিভৃতে লুকিয়ে কাঁদায় গোধূলিতে— মন আজও তার নাম জানে না, রূপ আজও তার নয়কো চেনা— কেবল যে সে ছায়ার বেশে স্বপ্নে আমার বেড়ায় ঘুরে॥
৩৮৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
আসা-যাওয়ার মাঝখানে একলা আছ চেয়ে কাহার পথ-পানে॥ আকাশে ওই কালোয় সোনায় শ্রাবণমেঘের কোণায় কোণায় আঁধার-আলোয় কোন্ খেলা যে কে জানে আসা-যাওয়ার মাঝখানে॥ শুকনো পাতা ধুলায় ঝরে, নবীন পাতায় শাখা ভরে। মাঝে তুমি আপন-হারা, পায়ের কাছে জলের ধারা যায় চলে ওই অশ্রু-ভরা কোন্ গানে আসা যাওয়ার মাঝখানে॥
৩৮৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
বারে বারে পেয়েছি যে তারে চেনায় চেনায় অচেনারে॥ যারে দেখা গেল তারি মাঝে না-দেখারই কোন্ বাঁশি বাজে, যে আছে বুকের কাছে কাছে চলেছি তাহারি অভিসারে॥ অপরূপ সে যে রূপে রূপে কী খেলা খেলিছে চুপে চুপে। কানে কানে কথা উঠে পূরে কোন্ সুদূরের সুরে সুরে, চোখে-চোখে-চাওয়া নিয়ে চলে কোন্ অজানারই পথপারে॥
৩৮৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
এ পথ গেছে কোন্খানে গো কোন্খানে তা কে জানে তা কে জানে॥ কোন্ পাহাড়ের পারে, কোন্ সাগরের ধারে, কোন্ দুরাশার দিক্-পানে— তা কে জানে তা কে জানে॥ এ পথ দিয়ে কে আসে যায় কোন্খানে তা কে জানে তা কে জানে। কেমন যে তার বাণী, কেমন হাসিখানি, যায় সে কাহার সন্ধানে— তা কে জানে তা কে জানে॥
৩৯০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
নিত্য নব সত্য তব শুভ্র আলোকময় পরিপূর্ণ জ্ঞানময় কবে হবে বিভাসিত মম চিত্ত-আকাশে॥ রয়েছি বসি দীর্ঘনিশি চাহিয়া উদয়দিশি ঊর্ধমুখে করপুটে— নবসুখ-নবপ্রাণ-নবদিবা-আশে॥ কী দেখিব, কী জানিব, না জানি সে কী আনন্দ— নূতন আলোক আপন মনোমাঝে। সে আলোকে মহাসুখে আপন আলয়মুখে চলে যাব গান গাহি— কে রহিবে আর দূর পরবাসে॥
৩৯১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
যদি ঝড়ের মেঘের মতো আমি ধাই চঞ্চল-অন্তর তবে দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে, দয়া কোরো ঈশ্বর॥ ওহে অপাপপুরুষ, দীনহীন আমি এসেছি পাপের কূলে— প্রভু, দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে, দয়া করে লও তুলে॥ আমি জলের মাঝারে বাস করি, তবু তৃষায় শুকায়ে মরি— প্রভু দয়া কোরো হে, দয়া করে দাও সুধায় হৃদয় ভরি॥
৩৯২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯২ তুমি আমাদের পিতা, তোমায় পিতা ব’লে যেন জানি, তোমায় নত হয়ে যেন মানি, তুমি কোরো না কোরো না রোষ। হে পিতা, হে দেব, দূর করে দাও যত পাপ, যত দোষ— যাহা ভলো তাই দাও আমাদের, যাহাতে তোমার তোষ॥ তোমা হতে সব সুখ হে পিতা, তোমা হতে সব ভলো। তোমাতেই সব সুখ হে পিতা, তোমাতেই সব ভালো। তুমিই ভালো হে তুমিই ভালো সকল-ভালোর সার— তোমারে নমস্কার হে পিতা, তোমারে নমস্কার॥
৩৯৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৩ প্রেমানন্দে রাখো পূর্ণ আমারে দিবসরাত। বিশ্বভুবনে নিরখি সতত সুন্দর তোমারে, চন্দ্র-সূর্য-কিরণে তোমার করুণ নয়নপাত॥ সুখসম্পদে করি হে পান তব প্রসাদবারি, দুখসঙ্কটে পরশ পাই তব মঙ্গলহাত॥ জীবনে জ্বালো অমর দীপ তব অনন্ত আশা, মরণ-অন্তে হউক তোমারি চরণে সুপ্রভাত॥ লহো লহো মম সব আনন্দ, সকল প্রীতি-গীতি— হৃদয়ে বাহিরে একমাত্র তুমি আমার নাথ॥
৩৯৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৪ মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না? কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না?। ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে হারাই-হারাই সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে॥ কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে। এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে? আর কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ— তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা বিসর্জন॥
৩৯৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৫ তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে কোলাহল। সুধাসাগরের তীরেতে বসিয়া পান করে শুধু হলাহল॥ আপনি কেটেছে আপনার মূল—না জানে সাঁতার, নাহি পায় কূল, স্রোতে যায় ভেসে, ডোবে বুঝি শেষে, করে দিবানিশি টলমল॥ আমি কোথা যাব, কাহারে শুধাব, নিয়ে যায় সবে টানিয়া। একেলা আমারে ফেলে যাবে শেষে অকূল পাথারে আনিয়া। সুহৃদের তরে চাই চারি ধারে, আঁখি করিতেছে ছলছল। আপনার ভরে মরি যে আপনি কাঁপিছে হৃদয় হীনবল॥
৩৯৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৬ কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে? অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে, বিরহে তব কাটে দিনরাত হে॥ স্বপনসম মিলাবে যদি কেন গো দিলে চেতনা— চকিতে শুধু দেখা দিয়ে চিরমরমবেদনা, আপনা-পানে চাহি শুধু নয়নজলপাত হে॥ পরশে তব জীবন নব সহসা যদি জাগিল কেন জীবন বিফল কর— মরণশরঘাত হে॥ অহঙ্কার চূর্ণ করো, প্রেমে মন পূর্ণ করো, হৃদয় মন হরণ করি রাখো তব সাথ হে॥
৩৯৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৭ তুমি ছেড়ে ছিলে, ভুলে ছিলে ব’লে হেরো গো কী দশা হয়েছে— মলিন বদন, মলিন হৃদয়, শোকে প্রাণ ডুবে রয়েছে॥ বিরহীর বেশে এসিছ হেথায় জানাতে বিরহবেদনা; দরশন নেব তবে চলে যাব, অনেক দিনের বাসনা॥ ‘নাথ নাথ’ ব’লে ডাকিব তোমারে, চাহিব হৃদয়ে রাখিতে— কাতর প্রাণের রোদন শুনিলে আর কি পারিবে থাকিতে? ও অমৃতরূপ দেখিব যখন মুছিব নয়নবারি হে— আর উঠিব না, পড়িয়া রহিব চরণতলে তোমারি হে॥
৩৯৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৮ অসীম আকাশে অগণ্য কিরণ, কত গ্রহ উপগ্রহ কত চন্দ্র তপন ফিরিছে বিচিত্র আলোক জ্বালায়ে— তুমি কোথায়, তুমি কোথায়?। হায় সকলই অন্ধকার— চন্দ্র, সূর্য, সকল কিরণ, আঁধার নিখিল বিশ্বজগত। তোমার প্রকাশ হৃদয়মাঝে সুন্দর মোর নাথ— মধুর প্রেম-আলোকে তোমারি মাধুরী তোমারে প্রকাশে॥
৩৯৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৩৯৯ চরণধ্বনি শুনি তব, নাথ, জীবনতীরে কত নীরব নির্জনে কত মধুসমীরে॥ গগনে গ্রহতারাচয় অনিমেষে চাহি রয়, ভাবনাস্রোত হৃদয়ে বয় ধীরে একান্ত ধীরে॥ চাহিয়া রহে আঁখি মম তৃষ্ণাতুর পাখিসম, শ্রবণ রয়েছি মেলি চিত্তগভীরে— কোন্ শুভপ্রাতে দাঁড়াবে হৃদিমাঝে, ভুলিব সব দুঃখ সুখ ডুবিয়া আনন্দনীরে॥
৪০০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০০ শূন্য হাতে ফিরি, হে নাথ, পথে পথে— ফিরি হে দ্বারে দ্বারে— চিরভিখারি হৃদি মম নিশিদিন চাহে কারে॥ চিত্ত না শান্তি জানে, তৃষ্ণা না তৃপ্তি মানে— যাহা পাই তাই হারাই, ভাসি অশ্রুধারে॥ সকল যাত্রী চলি গেল, বহি গেল সব বেলা, আসে তিমিরযামিনী, ভাঙিয়া গেল মেলা— কত পথ আছে বাকি, যাব চলি ভিক্ষা রাখি, কোথা জ্বলে গৃহপ্রদীপ কোন্ সিন্ধুপারে॥
৪০১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০১ হৃদয়বেদনা বহিয়া, প্রভু, এসেছি তব দ্বারে। তুমি অন্তর্যামী হৃদয়স্বামী, সকলই জানিছ হে— যত দুঃখ লাজ দারিদ্র্য সঙ্কট আর জানাইব কারে?। অপরাধ কত করেছি, নাথ, মোহপাশে প’ড়ে— তুমি ছাড়া, প্রভু, মার্জনা কেহ করিবে না সংসারে॥ সব বাসনা দিব বিসর্জন তোমার প্রেমপাথারে, সব বিরহ বিচ্ছেদ ভুলিব তব মিলন-অমৃতধারে। আর আপন ভাবনা পারি না ভাবিতে, তুমি লহো মোর ভার— পরিশ্রান্ত জনে, প্রভু, লয়ে যাও সংসারসাগরপারে।
৪০২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০২ কেন জাগে না, জাগে না অবশ পরান— নিশিদিন অচেতন ধূলিশয়ান?। জাগিছে তারা নিশীথ-আকাশে, জাগিছে শত অনিমেষ নয়ান॥ বিহগ গাহে বনে ফুটে ফুলরাশি, চন্দ্রমা হাসে সুধাময় হাসি— তব মাধুরী কেন জাগে না প্রাণে? কেন হেরি না তব প্রেমবয়ান॥ পাই জননীর অযাচিত স্নেহ, ভাই ভগিনী মিলি মধুময় গেহ কত ভাবে সদা তুমি আছ হে কাছে, কেন করি তোমা হতে দূরে প্রয়াণ?।
৪০৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৩ যাদের চাহিয়া তোমারে ভুলেছি তারা তো চাহে না আমারে; তারা আসে, তারা চলে যায় দূরে, ফেলে যায় মরু-মাঝারে॥ দু দিনের হাসি দু দিনে ফুরায়, দীপ নিভে যায় আঁধারে; কে রহে তখন মুছাতে নয়ন, ডেকে ডেকে মরি কাহারে?। যাহা পাই তাই ঘরে নিয়ে যাই আপনার মন ভুলাতে— শেষে দেখি হায় ভেঙে সব যায়, ধুলা হয়ে যাবে ধুলাতে। সুখের আশায় মরি পিপাসায় ডুবে মরি দুখপাথারে— রবি শশী তারা কোথা হয় হারা, দেখিতে না পাই তোমারে॥
৪০৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৪ আমি জেনে শুনে তবু ভুলে আছি, দিবস কাটে বৃথায় হে— আমি যেতে চাই তব পথপানে, কত বাধা পায় পায় হে॥ চারি দিকে হেরো ঘিরিছে কারা, শত বাঁধনে জড়ায় হে— আমি ছাড়াতে চাহি, ছাড়ে না কেন গো ডুবায়ে রাখে মায়ায় হে॥ দাও ভেঙে দাও এ ভবের সুখ, কাজ নেই এ খেলায় হে। আমি ভুলে থাকি যত অবোধের মতো বেলা বহে তত যায় হে॥ হানো তব বাজ হৃদয়গহনে, দুখানল জ্বালো তায় হে— নয়নের জলে ভাসায়ে আমারে সে জল দাও মুছায়ে হে॥ শূন্য করে দাও হৃদয় আমার, আসন পাতো সেথায় হে— তুমি এসো এসো, নাথ হয়ে বোসো, ভুলো না আর আমায় হে॥
৪০৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৫ নয়ান ভাসিল জলে— শূন্য হিয়াতলে ঘনাইল নিবিড় সজল ঘন প্রসাদপবনে, জাগিল রজনী হরষে হরষে রে॥ তাপহরণ তৃষিতশরণ জয় তাঁর দয়া গাও রে। জাগো রে আনন্দে চিতচাতক জাগো— মৃদু মৃদু মধু মধু প্রেম বরষে বরষে রে॥
৪০৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৬ হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব; ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ॥ নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী— কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী, বিকশিত কর’ প্রেমপদ্ম চিরমধুনিষ্যন্দ। শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য, করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য। এস’ দানবীর, দাও ত্যাগকঠিন দীক্ষা। মহাভিক্ষু, লও সবার অহঙ্কারভিক্ষা। লোক লোক ভুলুক শোক, খণ্ডন কর’ মোহ, উজ্জ্বল হোক জ্ঞানসূর্য-উদয়সমারোহ— প্রাণ লভুক সকল ভুবন, নয়ন লভুক অন্ধ। শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য, করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য। ত্রন্দনময় নিখিলহৃদয় তাপদহনদীপ্ত বিষয়বিষবিকারজীর্ণ খিন্ন অপরিতৃপ্ত। দেশ দেশ পরিল তিলক রক্তকলুষগ্লানি, তব মঙ্গলশঙ্খ আন’ তব দক্ষিণপাণি— তব শুভসঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ। শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য, করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য॥
৪০৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৭ অনেক দিয়েছ নাথ আমায় অনেক দিয়েছ নাথ, আমার বাসনা তবু পুরিল না— দীনদশা ঘুচিল না, অশ্রুবারি মুছিল না, গভীর প্রাণের তৃষা মিটিল না, মিটিল না॥ দিয়েছ জীবন মন, প্রাণপ্রিয় পরিজন, সুধাস্নিগ্ধ সমীরণ, নীলকান্ত অম্বর, শ্যামশোভা ধরণী। এত যদি দিলে, সখা, আরো দিতে হবে হে— তোমারে না পেলে আমি ফিরিব না, ফিরিব না॥
৪০৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৮ তব অমল পরশরস, তব শীতল শান্ত পুণ্যকর অন্তরে দাও। তব উজ্জ্বল জ্যোতি বিকাশি হৃদয়মাঝে মম চাও॥ তব মধুময় প্রেমরসসুন্দরসুগন্ধে জীবন ছাও। জ্ঞান ধ্যান তব, ভক্তি-অমৃত তব, শ্রী আনন্দ জাগাও॥
৪০৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪০৯ বীণা বাজাও হে মম অন্তরে॥ সজনে বিজনে, বন্ধু, সুখে দুঃখে বিপদে— আনন্দিত তান শুনাও হে মম অন্তরে॥
৪১০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১০ শান্তি করো বরিষন নীরব ধারে, নাথ, চিত্তমাঝে সুখে দুখে সব কাজে, নির্জনে জনসমাজে॥ উদিত রাখো, নাথ, তোমার প্রেমচন্দ্র অনিমেষ মম লোচনে গভীরতিমিরমাঝে॥
৪১১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১১ হে সখা, মম হৃদয়ে রহো। সংসারে সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহো॥ নাথ, তুমি এসো ধীরে সুখ-দুখ-হাসি-নয়ননীরে, লহো আমার জীবন ঘিরে— সংসারে সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহো॥ স্বরলিপি
৪১২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১২ লহো লহো তুলি লও হে ভূমিতল হতে ধূলিম্লান এ পরান— রাখো তব কৃপাচোখে, রাখো তব স্নেহকরতলে। রাখো তারে আলোকে, রাখো তারে অমৃতে, রাখো তারে নিয়ত কল্যাণে, রাখো তারে কৃপাচোখে, রাখো তারে স্নেহকরতলে॥
৪১৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৩ চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না। সংসারগহনে নির্ভয়নির্ভর, নির্জনসজনে সঙ্গে রহো॥ অধনের হও ধন, অনাথের নাথ হও হে, অবলের বল। জরাভারাতুরে নবীন করো ওহে সুধাসাগর॥
৪১৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৪ স্বামী, তুমি এসো আজ অন্ধকার হৃদয়মাঝ— পাপে ম্লান পাই লাজ, ডাকি হে তোমারে॥ ত্রন্দন উঠিছে প্রাণে, মন শান্তি নাহি মানে, পথ তবু নাহি জানে আপন আঁধারে॥ ধিক ধিক জনম মম, বিফল বিষয়শ্রম— বিফল ক্ষণিক প্রেম টুটিয়া যায় বারবার। সন্তাপে হৃদয় দহে, নয়নে অশ্রুবারি বহে, বাড়িছে বিষয়পিপাসা বিষম বিষবিকারে॥
৪১৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৫ হায় কে দিবে আর সান্ত্বনা। সকলে গিয়েছে হে, তুমি যেয়ো না— চাহো প্রসন্ন নয়নে, প্রভু, দীন অধীন জনে॥ চারি দিকে চাই, হেরি না কাহারে। কেন গেলে ফেলে একেলা আঁধারে— হেরো গো শূন্য ভুবন মম॥
৪১৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৬ আর কত দূরে আছে সে আনন্দধাম। আমি শ্রান্ত, আমি অন্ধ, আমি পথ নাহি জানি॥ রবি যায় অস্তাচলে আঁধারে ঢাকে ধরণী— করো কৃপা অনাথে হে বিশ্বজনজননী॥ অতৃপ্ত বাসনা লাগি ফিরিয়াছি পথে পথে— বৃথা খেলা, বৃথা মেলা, বৃথা বেলা গেল বহে। আজি সন্ধ্যাসমীরণে লহো শান্তিনিকেতনে, স্নেহকরপরশনে চিরশান্তি দেহো আনি॥
৪১৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৭ কামনা করি একান্তে হউক বরষিত নিখিল বিশ্বে সুখ শান্তি॥ পাপতাপ হিংসা শোক পাসরে সকল লোক, সকল প্রাণী পায় কূল সেই তব তাপিতশরণ অভয়চরণপ্রান্তে॥
৪১৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৮ নাথ হে, প্রেমপথে সব বাধা ভাঙিয়া দাও। মাঝে কিছু রেখো না, রেখো না— থেকো না, থেকো না দূরে॥ নির্জনে সজনে অন্তরে বাহিরে নিত্য তোমারে হেরিব॥
৪১৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪১৯ পূর্ণ-আনন্দ পূর্ণমঙ্গলরূপে হৃদয়ে এসো, এসো মনোরঞ্জন॥ আলোকে আঁধার হউক চূর্ণ অমৃতে মৃত্যু করো পূর্ণ — করো গভীরদারিদ্র্যভঞ্জন॥ সকল সংসার দাঁড়াবে সরিয়া তুমি হৃদয়ে আসিছ দেখি— জ্যোতির্ময় তোমার প্রকাশে শশী তপন পায় লাজ, সকলের তুমি গর্বগঞ্জন॥
৪২০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২০ সংশয়তিমিরমাঝে না হেরি গতি হে। প্রেম-আলোকে প্রকাশো জগপতি হে॥ বিপদে সম্পদে থেকো না দূরে, সতত বিরাজো হৃদয়পুরে— তোমা বিনে অনাথ আমি অতি হে॥ মিছে আশা লয়ে সতত ভ্রান্ত, তাই প্রতিদিন হতেছি শ্রান্ত, তবু চঞ্চল বিষয়ে মতি হে— নিবারো নিবারো প্রাণের ত্রন্দন, কাটো হে কাটো হে এ মায়াবন্ধন, রাখো রাখো চরণে এ মিনতি হে॥
৪২১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২১ নিশিদিন মোর পরানে প্রিয়তম মম কত-না বেদনা দিয়ে বারতা পাঠালে॥ ভরিলে চিত্ত মম নিত্য তুমি প্রেমে প্রাণে গানে হায় থাকি আড়ালে॥
৪২২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২২ আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি?। তবু কেন হেরি না তোমার জ্যোতি, কেন দিশাহারা অন্ধকারে?। অকূলের কূল তুমি আমার, তবু কেন ভেসে যাই মরণের পারাবারে? আনন্দঘন বিভু, তুমি যার স্বামী সে কেন ফিরে পথে দ্বারে দ্বারে?।
৪২৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৩ এ মোহ-আবরণ খুলে দাও, দাও হে॥ সুন্দর মুখ তব হেরি নয়ন ভরি, চাও হৃদয়মাঝে চাও হে॥
৪২৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৪ ডাকিছ কে তুমি তাপিত জনে তাপহরণ স্নেহকোলে॥ নয়নসলিলে ফুটেছে হাসি, ডাক শুনে সবে ছুটে চলে তাপহরণ স্নেহকোলে॥ ফিরিছে যারা পথে পথে, ভিক্ষা মাগিছে দ্বারে দ্বারে শুনেছে তাহারা তব করুণা— দুখীজনে তুমি নেবে তুলে তাপহরণ স্নেহকোলে॥
৪২৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৫ আজি নাহি নাহি নিদ্রা অঁখিপাতে। তোমার ভবনতলে হেরি প্রদীপ জ্বলে, দূরে বাহিরে তিমিরে আমি জাগি জোড়হাতে॥ ত্রন্দন ধ্বনিছে পথহারা পবনে, রজনী মূর্ছাগত বিদ্যুতঘাতে। দ্বার খোলো হে দ্বার খোলো— প্রভু, করো দয়া, দেহো দেখা দুখরাতে॥
৪২৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৬ তিমিরবিভাবরী কাটে কেমনে জীর্ণ ভবনে, শূন্য জীবনে— হৃদয় শুকাইল প্রেম বিহনে॥ গহন আঁধার কবে পুলকে পূর্ণ হবে ওহে আনন্দময়, তোমার বীণারবে— পশিবে পরানে তব সুগন্ধ বসন্তপবনে॥
৪২৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৭ অমৃতের সাগরে আমি যাব যাব রে, তৃষ্ণা জ্বলিছে মোর প্রাণে॥ কোথা পথ বলো হে বলো, ব্যথার ব্যথী হে— কোথা হতে কলধ্বনি আসিছে কানে॥
৪২৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৮ কার মিলন চাও বিরহী— তাঁহারে কোথা খুঁজিছ ভব-অরণ্যে কুটিল জটিল গহনে শান্তিসুখহীন ওরে মন॥ দেখো দেখো রে চিত্তকমলে চরণপদ্ম রাজে—হায়! অমৃতজ্যোতি কিবা সুন্দর ওরে মন॥
৪২৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪২৯ তোমা লাগি, নাথ, জাগি জাগি হে— সুখ নাই জীবনে তোমা বিনা॥ সকলে চলে যায় ফেলে চিরশরণ হে— তুমি কাছে থাক সুখে দুখে নাথ, পাপে তাপে আর কেহ নাহি॥
৪৩০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩০ মোরে বারে বারে ফিরালে। পূজাফুল না ফুটিল দুখনিশা না ছুটিল, না টুটিল আবরণ॥ জীবন ভরি মাধুরী কী শুভলগনে জাগিবে? নাথ ওহে নাথ, তবে লবে তনু মন ধন?।
৪৩১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩১ কোথা হতে বাজে প্রেমবেদনা রে! ধীরে ধীরে বুঝি অন্ধকারঘন হৃদয়-অঙ্গনে আসে সখা মম॥ সকল দৈন্য তব দূর করো ওরে, জাগো সুখে ওরে প্রাণ। সকল প্রদীপ তব জ্বালো রে, জ্বালো রে— ডাকো আকুল স্বরে ‘এসো হে প্রিয়তম’॥
৪৩২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩২ নিকটে দেখিব তোমারে করেছি বাসনা মনে। চাহিব না হে, চাহিব না হে দূরদূরান্তর গগনে॥ দেখিব তোমারে গৃহমাঝারে জননীস্নেহে, ভ্রাতৃপ্রেমে, শত সহস্র মঙ্গলবন্ধনে॥ হেরিব উৎসবমাঝে, মঙ্গলকাজে, প্রতিদিন হেরিব জীবনে। হেরিব উজ্জ্বল বিমল মূর্তি তব শোকে দুঃখে মরণে। হেরিব সজনে নরনারীমুখে, হেরিব বিজনে বিরলে হে গভীর অন্তর-আসনে॥
৪৩৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৩ তোমার দেখা পাব ব’লে এসেছি-যে সখা! শুন প্রিয়তম হে, কোথা আছ লুকাইয়ে — তব গোপন বিজন গৃহে লয়ে যাও॥ দেহো গো সরায়ে তপন তারকা, আবরণ সব দূর করো হে, মোচন করো তিমির— জগত-আড়ালে থেকো না বিরলে, লুকায়ো না আপনারি মহিমা-মাঝে— তোমার গৃহের দ্বার খুলে দাও॥
৪৩৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৪ ঘোর দুঃখে জাগিনু, ঘনঘোরা যামিনী একেলা হায় রে—তোমার আশা হারায়ে॥ ভোর হল নিশা, জাগে দশ দিশা— আছি দ্বারে দাঁড়ায়ে উদয়পথপানে দুই বাহু বাড়ায়ে॥
৪৩৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৫ এ পরবাসে রবে কে হায়! কে রবে এ সংশয়ে সন্তাপে শোকে॥ হেথা কে রাখিবে দুখভয়সঙ্কটে— তেমন আপন কেহ নাহি এ প্রান্তরে হায় রে॥
৪৩৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৬ এখনো আঁধার রয়েছে হে নাথ— এ প্রাণ দীন মলিন, চিত অধীর, সব শূন্যময়॥ চারি দিকে চাহি, পথ নাহি নাহি— শান্তি কোথা, কোথা আলয়? কোথা তাপহারী পিপাসার বারি— হৃদয়ের চির-আশ্রয়॥
৪৩৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৭ ব্যাকুল প্রাণ কোথা সুদূরে ফিরে— ডাকি লহো, প্রভু, তব ভবনমাঝে ভবপারে সুধাসিন্ধুতীরে॥
৪৩৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৮ শূন্য প্রাণ কাঁদে সদা, প্রাণেশ্বর, দীনবন্ধু, দয়াসিন্ধু, প্রেমবিন্দু কাতরে করো দান। কোরো না, সখা, কোরো না চিরনিষ্ফল এই জীবন। প্রভু, জনমে মরণে তুমি গতি, চরণে দাও স্থান।
৪৩৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৩৯ সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে। সতত হায় ভাবনা শত শত, নিয়ত ভীত পীড়িত— শির নত কত অপমানে॥ জানো না রে অধ-ঊধের্ব বাহির-অন্তরে ঘেরি তোরে নিত্য রাজে সেই অভয়-আশ্রয়। তোলো আনত শির, ত্যজো রে ভয়ভার, সতত সরলচিতে চাহো তাঁরি প্রেমমুখপানে॥
৪৪০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪০ দূরে কোথায় দূরে দূরে আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে। যে বাঁশিতে বাতাস কাঁদে সেই বাঁশিটির সুরে সুরে॥ যে পথ সকল দেশ পারায়ে উদাস হয়ে যায় হারায়ে সে পথ বেয়ে কাঙাল পরান যেতে চায় কোন্ অচিন পুরে॥
৪৪১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪১ পিপাসা হায় নাহি মিটিল, নাহি মিটিল। গরলরসপানে জরজরপরানে মিনতি করি হে করজোড়ে, জুড়াও সংসারদাহ তব প্রেমের অমৃতে॥
৪৪২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪২ দিন যায় রে দিন যায় বিষাদে— স্বার্থকোলাহলে, ছলনায়, বিফলা বাসনায়॥ এসেছ ক্ষণতরে, ক্ষণপরে যাইবে চলে, জনম কাটে বৃথায় বাদবিবাদের কুমন্ত্রণায়॥
৪৪৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৩ তোমা-হীন কাটে দিবস হে প্রভু, হায় তোমা-হীন মোর স্বপন জাগরণ— কবে আসিবে হিয়ামাঝারে?।
৪৪৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৪ বর্ষ গেল, বৃথা গেল, কিছুই করি নি হায়— আপন শূন্যতা লয়ে জীবন বহিয়া যায়॥ তবু তো আমার কাছে নব রবি উদিয়াছে, তবু তো জীবন ঢালি বহিছে নবীন বায়॥ বহিছে বিমল ঊষা তোমার আশিসবাণী, তোমার করুণাসুধা হৃদয়ে দিতেছে আনি। রেখেছ জগতপুরে, মোরে তো ফেল নি দূরে, অসীম আশ্বাসে তাই পুলকে শিহরে কায়॥
৪৪৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৫ কেমনে ফিরিয়া যাও না দেখি তাঁহারে! কেমনে জীবন কাটে চির-অন্ধকারে॥ মহান জগতে থাকি বিস্ময়বিহীন আঁখি, বারেক না দেখ তাঁরে এ বিশ্বমাঝারে॥ যতনে জাগায়ে জ্যোতি ফিরে কোটি সূর্যলোক, তুমি কেন নিভায়েছ আত্মার আলোক? তাঁহার আহ্বানরবে আনন্দে চলিছে সবে, তুমি কেন বসে আছ ক্ষুদ্র এ সংসারে॥
৪৪৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৬ কে বসিলে আজি হৃদয়াসনে ভুবনেশ্বর প্রভু,— জাগাইলে অনুপম সুন্দর শোভা হে হৃদয়েশ্বর॥ সহসা ফুটিল ফুলমঞ্জরী শুকানো তরুতে, পাষাণে বহে সুধাধারা॥
৪৪৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৭ অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে। অমৃতভবন কোথা আছে তাহা কে জানে॥ হেরো আপন হৃদয়মাঝে ডুবিয়ে, এ কি শোভা! অমৃতময় দেবতা সতত বিরাজে এই মন্দিরে, এই সুধানিকেতনে॥
৪৪৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৮ ইচ্ছা যবে হবে লইয়ো পারে, পূজাকুসুমে রচিয়া অঞ্জলি আছি ব’সে ভবসিন্ধু-কিনারে॥ যত দিন রাখ তোমা মুখ চাহি ফুল্লমনে রব এ সংসারে॥ ডাকিবে যখনি তোমার সেবকে দ্রুত চলি যাইব ছাড়ি সবারে॥
৪৪৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৪৯ শুভ্র আসনে বিরাজ’ অরুণছটামাঝে, নীলাম্বরে ধরণী’পরে কিবা মহিমা তব বিকাশিল॥ দীপ্ত সূর্য তব মুকুটোপরি, চরণে কোটি তারা মিলাইল, আলোকে প্রেমে আনন্দে সকল জগত বিভাসিল॥
৪৫০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫০ পেয়েছি অভয়পদ, আর ভয় কারে— আনন্দে চলেছি ভবপারাবারপারে॥ মধুর শীতল ছায় শোক তাপ দূরে যায়, করুণাকিরণ তাঁর অরুণ বিকাশে। জীবনে মরণে আর কভু না ছাড়িব তাঁরে॥
৪৫১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫১ শুনেছে তোমার নাম অনাথ আতুর জন— এসেছে তোমার দ্বারে, শূন্য ফেরে না যেন॥ কাঁদে যারা নিরাশায় আঁখি যেন মুছে যায়, যেন গো অভয় পায় ত্রাসে-কম্পিত মন॥ কত শত আছে দীন অভাগা আলয়হীন, শোকে জীর্ণ প্রাণ কত কাঁদিতেছে নিশিদিন। পাপে যারা ডুবিয়াছে যাবে তারা কার কাছে— কোথা হায় পথ আছে, দাও তারে দরশন॥
৪৫২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫২ সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে। তুমি সদা যার হৃদে বিরাজ দুখজ্বালা সেই পাশরে— সব দুখজ্বালা সেই পাশরে॥ তোমার জ্ঞানে তোমার ধ্যানে তব নামে কত মাধুরী যেই ভকত সেই জানে, তুমি জানাও যারে সেই জানে। ওহে, তুমি জানাও যারে সেই জানে॥
৪৫৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৩ চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি তুমি হে প্রভু— তুমি চিরমঙ্গল সখা হে তোমার জগতে, চিরসঙ্গী চিরজীবনে॥ চিরপ্রীতিসুধানির্ঝর তুমি হে হৃদয়েশ— তব জয়সঙ্গীত ধ্বনিছে তোমার জগতে চিরদিবা চিররজনী॥
৪৫৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৪ বাঁচান বাঁচি, মারেন মরি— বলো ভাই ধন্য হরি॥ ধন্য হরি ভবের নাটে, ধন্য হরি রাজ্যপাটে, ধন্য হরি শ্মশানঘাটে, ধন্য হরি, ধন্য হরি। সুধা দিয়ে মাতান যখন ধন্য হরি, ধন্য হরি। ব্যথা দিয়ে কাঁদান যখন ধন্য হরি, ধন্য হরি। আত্মজনের কোলে বুকে ধন্য হরি হাসিমুখে, ছাই দিয়ে সব ঘরের সুখে ধন্য হরি, ধন্য হরি॥ আপনি কাছে আসেন হেসে ধন্য হরি, ধন্য হরি। ফিরিয়ে বেড়ান দেশে দেশে ধন্য হরি, ধন্য হরি। ধন্য হরি স্থলে জলে, ধন্য হরি ফুলে ফলে, ধন্য হৃদয়পদ্মদলে চরণ-আলোয় ধন্য করি॥
৪৫৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৫ সংসারে কোনো ভয় নাহি নাহি— ওরে ভয়চঞ্চল প্রাণ, জীবনে মরণে সবে রয়েছি তাঁহারি দ্বারে। অভয়শঙ্খ বাজে নিখিল অম্বরে সুগম্ভীর, দিশি দিশি দিবানিশি সুখে শোকে লোক-লোকান্তরে॥
৪৫৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৬ শক্তিরূপ হেরো তাঁর, আনন্দিত, অতন্দ্রিত, ভূর্লোকে ভুবর্লোকে— বিশ্বকাজে চিত্তমাঝে দিনে রাতে॥ জাগো রে জাগো জাগো, উৎসাহে উল্লাসে— পরান বাঁধো রে মরণহরণ পরমশক্তি-সাথে॥ শ্রান্তি আলস বিষাদ বিলাস দ্বিধা বিবাদ দূর করো রে। চলো রে—চলো রে কল্যাণে, চলো রে অভয়ে, চলো রে আলোকে, চলো বলে। দুখ শোক পরিহরি মিলো রে নিখিলে নিখিলনাথে॥
৪৫৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৭ শ্রান্ত কেন ওহে পান্থ, পথপ্রান্তে বসে একি খেলা! আজি বহে অমৃতসমীরণ, চলো চলো এইবেলা॥ তাঁর দ্বারে হেরো ত্রিভুবন দাঁড়ায়ে, সেথা অনন্ত উৎসব জাগে, সকল শোভা গন্ধ সঙ্গীত আনন্দের মেলা॥
৪৫৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৮ গাও বীণা—বীণা, গাও রে। অমৃতমধুর তাঁর প্রেমগান মানব-সবে শুনাও রে। মধুর তানে নীরস প্রাণে মধুর প্রেম জাগাও রে॥ ব্যথা দিয়ো না কাহারে, ব্যথিতের তরে পাষাণ প্রাণ কাঁদাও রে। নিরাশেরে কহো আশার কাহিনী, প্রাণে নব বল দাও রে। আনন্দময়ের আনন্দ-আলয় নব নব তানে ছাও রে। পড়ে থাকো সদা বিভুর চরণে, আপনারে ভুলে যাও রে॥
৪৫৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৫৯ কে রে ওই ডাকিছে, স্নেহের রব উঠিছে জগতে জগতে— তোরা আয় আয় আয় আয়॥ তাই আনন্দে বিহঙ্গ গান গায়, প্রভাতে সে সুধাস্বর প্রচারে। বিষাদ তবে কেন, অশ্রু বহে চোখে, শোককাতর আকুল কেন আজি॥ কেন নিরানন্দ, চলো সবে যাই— পূর্ণ হবে আশা॥
৪৬০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬০ মন্দিরে মম কে আসিলে হে! সকল গগন অমৃতমগন, দিশি দিশি গেল মিশি অমানিশি দূরে দূরে॥ সকল দুয়ার আপনি খুলিল, সকল প্রদীপ আপনি জ্বলিল, সব বীণা বাজিল নব নব সুরে সুরে॥
৪৬১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬১ একি করুণা করুণাময়! হৃদয়শতদল উঠিল ফুটি অমল কিরণে তব পদতলে॥ অন্তরে বাহিরে হেরিনু তোমারে লোকে লোকে লোকান্তরে— আঁধারে আলোকে সুখে দুখে, হেরিনু হে স্নেহে প্রেমে জগতময় চিত্তময়॥
৪৬২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬২ পেয়েছি সন্ধান তব অন্তর্যামী, অন্তরে দেখেছি তোমারে॥ চকিতে চপল আলোকে, হৃদয়শতদলমাঝে, হেরিনু একি অপরূপ রূপ॥ কোথা ফিরিতেছিলাম পথে পথে দ্বারে দ্বারে মাতিয়া কলরবে— সহসা কোলাহলমাঝে শুনেছি তব আহ্বান, নিভৃতহৃদয়মাঝে মধুর গভীর শান্ত বাণী॥
৪৬৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৩ আমার হৃদয়সমুদ্রতীরে কে তুমি দাঁড়ায়ে! কাতর পরান ধায় বাহু বাড়ায়ে॥ হৃদয়ে উথলে তরঙ্গ চরণপরশের তরে, তারা চরণকিরণ লয়ে কাড়াকাড়ি করে॥ মেতেছে হৃদয় আমার, ধৈরজ না মানে— তোমারে ঘেরিতে চায়, নাচে সঘনে॥ সখা, ওইখেনেতে থাকো তুমি, যেয়ো না চলে— আজি হৃদয়সাগরের বাঁধ ভাঙি সবলে। কোথা হতে আজি প্রেমের পবন ছুটেছে, আমার হৃদয়ে তরঙ্গ কত নেচে উঠেছে। তুমি দাঁড়াও, তুমি যেয়ো না— আমার হৃদয়ে তরঙ্গ আজি নেচে উঠেছে॥
৪৬৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৪ জননী, তোমার করুণ চরণখানি হেরিনু আজি এ অরুণকিরণরূপে॥ জননী, তোমার মরণহরণ বাণী নীরব গগনে ভরি উঠে চুপে চুপে॥ তোমারে নমি হে সকল ভুবনমাঝে, তোমারে নমি হে সকল জীবনকাজে, তনু মন ধন করি নিবেদন আজি ভক্তিপাবন তোমার পূজার ধূপে। জননী, তোমার করুণ চরণখানি হেরিনু আজি এ অরুণকিরণরূপে॥
৪৬৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৫ তিমিরদুয়ার খোলো— এসো, এসো নীরবচরণে। জননী আমার, দাঁড়াও এই নবীন অরুণকিরণে॥ পুণ্যপরশপুলকে সব আলস যাক দূরে। গগনে বাজুক বীণা জগত-জাগানো সুরে। জননী, জীবন জুড়াও তব প্রসাদসুধাসমীরণে। জননী আমার, দাঁড়াও মম জ্যোতিবিভাসিত নয়নে॥
৪৬৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৬ তুমি জাগিছ কে? তব আঁখিজ্যোতি ভেদ করে সঘন গহন তিমিররাতি॥ চাহিছ হৃদয়ে অনিমেষ নয়নে, সংশয়চপল প্রাণ কম্পিত ত্রাসে॥ কোথা লুকাব তোমা হতে স্বামী— এ কলঙ্কিত জীবন তুমি দেখিছ, জানিছ— প্রভু, ক্ষমা করো হে। তব পদপ্রান্তে বসি একান্তে দাও কাঁদিতে আমায়, আর কোথা যাই॥
৪৬৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৭ আজি শুভ শুভ্র প্রাতে কিবা শোভা দেখালে শান্তিলোক জ্যোতির্লোক প্রকাশি। নিখিল নীল অম্বর বিদারিয়া দিক্দিগন্তে আবরিয়া রবি শশী তারা পুণ্যমহিমা উঠে বিভাসি॥
৪৬৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৮ ভক্তহৃদিবিকাশ প্রাণবিমোহন নব নব তব প্রকাশ নিত্য নিত্য চিত্তগগনে হৃদীশ্বর॥ কভু মোহবিনাশ মহারুদ্রজ্বালা, কভু বিরাজ ভয়হর শান্তিসুধাকর॥ চঞ্চল হর্ষশোকসঙ্কুল কল্লোল ’পরে স্থির বিরাজে চিরদিন মঙ্গল তব রূপ। প্রেমমূর্তি নিরুপম প্রকাশ করো নাথ হে, ধ্যাননয়নে পরিপূর্ণ রূপ তব সুন্দর॥
৪৬৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৬৯ বাণী তব ধায় অনন্ত গগনে লোকে লোকে, তব বাণী গ্রহ চন্দ্র দীপ্ত তপন তারা॥ সুখ দুখ তব বাণী, জনম মরণ বাণী তোমার, নিভৃত গভীর তব বাণী ভক্তহৃদয়ে শান্তিধারা॥
৪৭০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭০ প্রথম আদি তব শক্তি— আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারি হে গগনে গগনে॥ তোমার আদি বাণী বহিছে তব আনন্দ, জাগিছে নব নব রসে হৃদয়ে মনে॥ তোমার চিদাকাশে ভাতে সূরয চন্দ্র তারা, প্রাণতরঙ্গ উঠে পবনে। তুমি আদিকবি, কবিগুরু তুমি হে, মন্ত্র তোমার মন্দ্রিত সব ভুবনে॥
৪৭১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭১ শীতল তব পদছায়া, তাপহরণ তব সুধা, অগাধ গভীর তোমার শান্তি, অভয় অশোক তব প্রেমমুখ॥ অসীম করুণা তব, নব নব তব মাধুরী, অমৃত তোমার বাণী॥
৪৭২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭২ হে মহাপ্রবল বলী, কত অসংখ্য গ্রহ তারা তপন চন্দ্র ধারণ করে তোমার বাহু, নরপতি ভূমাপতি হে দেববন্দ্য। ধন্য ধন্য তুমি মহেশ, ধন্য, গাহে সর্ব দেশ— স্বর্গে মর্তে বিশ্বলোকে এক ইন্দ্র॥ অন্ত নাহি জানে মহাকাল মহাকাশ, গীতছন্দে করে প্রদক্ষিণ। তব অভয়চরণে শরণাগত দীনহীন, হে রাজা বিশ্ববন্ধু॥
৪৭৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৩ জগতে তুমি রাজা, অসীম প্রতাপ— হৃদয়ে তুমি হৃদয়নাথ হৃদয়হরণরূপ॥ নীলাম্বর জ্যোতিখচিত চরণপ্রান্তে প্রসারিত, ফিরে সভয়ে নিয়মপথে অনন্তলোক॥ নিভৃত হৃদয়মাঝে কিবা প্রসন্ন মুখচ্ছবি প্রেমপরিপূর্ণ মধুর ভাতি। ভকতহৃদয়ে তব করুণারস সতত বহে, দীনজনে সতত করো অভয় দান॥
৪৭৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৪ তুমি ধন্য ধন্য হে, ধন্য তব প্রেম, ধন্য তোমার জগতরচনা॥ একি অমৃতরসে চন্দ্র বিকাশিলে, এ সমীরণ পুরিলে প্রাণহিল্লোলে॥ একি প্রেমে তুমি ফুল ফুটাইলে, কুসুমবন ছাইলে শ্যাম পল্লবে॥ একি গভীর বাণী শিখালে সাগরে, কী মধুগীতি তুলিলে নদীকল্লোলে! একি ঢালিছ সুধা, মানবহৃদয়ে, তাই হৃদয় গাহিছে প্রেম-উল্লাসে॥
৪৭৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৫ তাঁহারে আরতি করে চন্দ্র তপন, দেব মানব বন্দে চরণ— আসীন সেই বিশ্বশরণ তাঁর জগতমন্দিরে॥ অনাদিকাল অনন্তগগন সেই অসীম-মহিমা-মগন— তাহে তরঙ্গ উঠে সঘন আনন্দ-নন্দ-নন্দ রে॥ হাতে লয়ে ছয় ঋতুর ডালি পায়ে দেয় ধরা কুসুম ঢালি— কতই বরন, কতই গন্ধ কত গীত কত ছন্দ রে॥ বিহগগীত গগন ছায়— জলদ গায়, জলধি গায়— মহাপবন হরষে ধায়, গাহে গিরিকন্দরে। কত কত শত ভকতপ্রাণ হেরিছে পুলকে, গাহিছে গান— পুণ্য কিরণে ফুটিছে প্রেম, টুটিছে মোহবন্ধ রে॥
৪৭৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৬ আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর॥ মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে, বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে॥ গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে॥ ধরণী’পর ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা ফুলপল্লব-গীতগন্ধ-সুন্দর-বরনে॥ বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা, করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে॥ স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ, কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে॥ জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্ব শ্রীসম্পদ ভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে॥
৪৭৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৭ ওই রে তরী দিল খুলে। তোর বোঝা কে নেবে তুলে?। সামনে যখন যাবি ওরে থাক্-না পিছন পিছে পড়ে— পিঠে তারে বইতে গেলি, একলা পড়ে রইলি কূলে॥ ঘরের বোঝা টেনে টেনে পারের ঘাটে রাখলি এনে— তাই যে তোরে বারে বারে ফিরতে হল, গেলি ভুলে॥ ডাক্ রে আবার মাঝিরে ডাক্, বোঝা তোমার যাক ভেসে যাক— জীবনখানি উজাড় করে সঁপে দে তার চরণমূলে॥
৪৭৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৮ আমি কী ব’লে করিব নিবেদন আমার হৃদয় প্রাণ মন॥ চিত্তে আসি দয়া করি নিজে লহো অপহরি, করো তারে আপনারি ধন—আমার হৃদয় প্রাণ মন॥ শুধু ধূলি, শুধু ছাই, মূল্য যার কিছু নাই, মূল্য তারে করো সমর্পণ স্পর্শে তব পরশরতন! তোমারি গৌরবে যবে আমার গৌরব হবে সব তবে দিব বিসর্জন— আমার হৃদয় প্রাণ মন॥
৪৭৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৭৯ সংসার যবে মন কেড়ে লয়, জাগে না যখন প্রাণ, তখনো, হে নাথ, প্রণমি তোমায় গাহি বসে তব গান॥ অন্তরযামী, ক্ষমো সে আমার শূন্য মনের বৃথা উপহার— পুষ্পবিহীন পূজা-আয়োজন, ভক্তিবিহীন তান॥ ডাকি তব নাম শুষ্ক কণ্ঠে, আশা করি প্রাণপণে— নিবিড় প্রেমের সরস বরষা যদি নেমে আসে মনে। সহসা একদা আপনা হইতে ভরি দিবে তুমি তোমার অমৃতে, এই ভরসায় করি পদতলে শূন্য হৃদয় দান॥
৪৮০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮০ ওহে জীবনবল্লভ, ওহে সাধনদুর্লভ, আমি মর্মের কথা অন্তরব্যথা কিছুই নাহি কব— শুধু জীবন মন চরণে দিনু বুঝিয়া লহো সব। আমি কী আর কব॥ এই সংসারপথসঙ্কট অতি কণ্টকময় হে, আমি নীরবে যাব হৃদয়ে লয়ে প্রেমমুরতি তব। আমি কী আর কব॥ সুখ দুখ সব তুচ্ছ করিনু প্রিয় অপ্রিয় হে— তুমি নিজ হাতে যাহা সঁপিবে তাহা মাথায় তুলিয়া লব। আমি কী আর কব॥ অপরাধ যদি ক’রে থাকি পদে, না করো যদি ক্ষমা, তবে পরানপ্রিয়, দিয়ো হে দিয়ো বেদনা নব নব। তবু ফেলো না দূরে, দিবসশেষে ডেকে নিয়ো চরণে— তুমি ছাড়া আর কী আছে আমার মৃত্যু-আঁধার ভব। আমি কী আর কব॥
৪৮১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮১ সবাই যারে সব দিতেছে তার কাছে সব দিয়ে ফেলি। ক’বার আগে চাবার আগে আপনি আমায় দেব মেলি॥ নেবার বেলা হলেম ঋণী, ভিড় করেছি, ভয় করি নি— এখনো ভয় করব না রে, দেবার খেলা এবার খেলি॥ প্রভাত তারি সোনা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নেচেকুঁদে। সন্ধ্যা তারে প্রণাম ক’রে সব সোনা তার দেয় রে শুধে। ফোটা ফুলের আনন্দ রে ঝরা ফুলেই ফলে ধরে— আপনাকে, ভাই, ফুরিয়ে-দেওয়া চুকিয়ে দে তুই বেলাবেলি॥
৪৮২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮২ আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি— আমার যত বিত্ত, প্রভু, আমার যত বাণী॥ আমার চোখের চেয়ে দেখা, আমার কানের শোনা, আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা— সব দিতে হবে॥ আমার প্রভাত, আমার সন্ধ্যা হৃদয়পত্রপুটে গোপন থেকে তোমার পানে উঠবে ফুটে ফুটে। এখন সে যে আমার বীণা, হতেছে তার বাঁধা, বাজবে যখন তোমার হবে তোমার সুরে সাধা— সব দিতে হবে॥ তোমারি আনন্দ আমার দুঃখে সুখে ভ’রে আমার ক’রে নিয়ে তবে নাও যে তোমার ক’রে। আমার ব’লে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে তোমার ক’রে দেব তখন তারা আমার হবে— সব দিতে হবে॥
৪৮৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৩ আমি দীন, অতি দীন— কেমনে শুধিব, নাথ হে, তব করুণাঋণ॥ তব স্নেহ শত ধারে, ডুবাইছে সংসারে, তাপিত হৃদিমাঝে ঝরিছে নিশিদিন॥ হৃদয়ে যা আছে দিব তব কাছে, তোমারি এ প্রেম দিব তোমারে— চিরদিন তব কাজে রহিব জগতমাঝে, জীবন করেছি তোমার চরণতলে লীন॥
৪৮৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৪ কী ভয় অভয়ধামে, তুমি মহারাজা—ভয় যায় তব নামে। নির্ভয়ে অযুত সহস্র লোক ধায় হে, গগনে গগনে সেই অভয়নাম গায় হে॥ তব বলে কর বলী যারে, কৃপাময়, লোকভয় বিপদ মৃত্যুভয় দূর হয় তার। আশা বিকাশে, সব বন্ধন ঘুচে, নিত্য অমৃতরস পায় হে॥
৪৮৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৫ আনন্দ রয়েছে জাগি ভুবনে তোমার তুমি সদা নিকটে আছ ব’লে। স্তব্ধ অবাক নীলাম্বরে রবি শশী তারা গাঁথিছে হে শুভ্র কিরণমালা॥ বিশ্বপরিবার তোমার ফেরে সুখে আকাশে, তোমার ত্রোড় প্রসারিত ব্যোমে ব্যোমে। আমি দীন সন্তান আছি সেই তব আশ্রয়ে তব স্নেহমুখপানে চাহি চিরদিন॥
৪৮৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৬ সকল ভয়ের ভয় যে তারে কোন্ বিপদে কাড়বে? প্রাণের সঙ্গে যে প্রাণ গাঁথা কোন্ কালে সে ছাড়বে॥ নাহয় গেল সবই ভেসে, রইবে তো সেই সর্বনেশে, যে লাভ সকল ক্ষতির শেষে সে লাভ কেবল বাড়বে॥ সুখ নিয়ে, ভাই, ভয়ে থাকি, আছে আছে দেয় সে ফাঁকি— দুঃখে যে সুখ থাকে বাকি কেই বা সে সুখ নাড়বে? যে পড়েছে পড়ার শেষে ঠাঁই পেয়েছে তলায় এসে, ভয় মিটেছে, বেঁচেছে সে—তারে কে আর পাড়বে?।
৪৮৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৭ নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে॥ বাসনার বশে মন অবিরত ধায় দশ দিশে পাগলের মতো, স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত জাগিছ শয়নে স্বপনে॥ সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ, তুমি আছ তার আছে তব স্নেহ— নিরাশ্রয় জন, পথ যার গেহ, সেও আছে তব ভবনে। তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর, সমুখে অনন্ত জীবনবিস্তার— কালপারাবার করিতেছ পার কেহ নাহি জানে কেমনে॥ জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি, তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি, যত পাই তোমায় আরো তত যাচি, যত জানি তত জানি নে। জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর— তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে॥
৪৮৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৮ দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে। নইলে কি আর পারব তোমার চরণ ছুঁতে॥ তোমায় দিতে পূজার ডালি বেরিয়ে পড়ে সকল কালী, পরান আমার পারি নে তাই পায়ে থুতে॥ এত দিন তো ছিল না মোর কোনো ব্যথা, সর্ব অঙ্গে মাখা ছিল মলিনতা। আজ ওই শুভ্র কোলের তরে ব্যাকুল হৃদয় কেঁদে মরে— দিয়ো না গো দিয়ো না আর ধুলায় শুতে॥
৪৮৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৮৯ এ মণিহার আমায় নাহি সাজে— এরে পরতে গেলে লাগে, এরে ছিঁড়তে গেলে বাজে॥ কণ্ঠ যে রোধ করে, সুর তো নাহি সরে— ওই দিকে যে মন পড়ে রয়, মন লাগে না কাজে॥ তাই তো বসে আছি, এ হার তোমায় পরাই যদি তবেই আমি বাঁচি। ফুলমালার ডোরে বরিয়া লও মোরে— তোমার কাছে দেখাই নে মুখ মণিমালার লাজে॥
৪৯০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯০ যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে॥ যখন তোমায় প্রণাম করি আমি প্রণাম আমার কোন্খানে যায় থামি। তোমার চরণ যেথায় নামে অপমানের তলে সেথায় আমার প্রণাম নামে না যে সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে॥ অহঙ্কার তো পায় না নাগাল যেথায় তুমি ফের রিক্তভূষণ দীন দরিদ্র সাজে সবার পিছে, সবার নিচে, সবহারাদের মাঝে। ধনে মানে যেথায় আছে ভরি সেথায় তোমার সঙ্গ আশা করি, সঙ্গী হয়ে আছ যেথায় সঙ্গীহীনের ঘরে সেথায় আমার হৃদয় নামে না যে সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে॥
৪৯১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯১ ওই আসনতলের মাটির ’পরে লুটিয়ে রব, তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥ কেন আমায় মান দিয়ে আর দূরে রাখ? চিরজনম এমন ক’রে ভুলিয়ো নাকো। অসম্মানে আনো টেনে পায়ে তব। তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥ আমি তোমার যাত্রীদলের রব পিছে, স্থান দিয়ো হে আমায় তুমি সবার নীচে। প্রসাদ লাগি কতই লোকে আসে ধেয়ে, আমি কিছু চাইব না তো, রইব চেয়ে— সবার শেষে যা বাকি রয় তাহাই লব। তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥
৪৯২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯২ আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে। সকল অহঙ্কার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥ নিজেরে করিতে গৌরব দান নিজেরে কেবলই করি অপমান, আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া ঘুরে মরি পলে পলে। সকল অহঙ্কার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥ আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে, তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ আমার জীবনমাঝে। যাচি হে তোমার চরমশান্তি পরানে তোমার পরমকান্তি— আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও হৃদয়পদ্মদলে। সকল অহঙ্কার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥
৪৯৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৩ গরব মম হরেছ, প্রভু, দিয়েছ বহু লাজ। কেমনে মুখ সমুখে তব তুলিব আমি আজ॥ তোমারে আমি পেয়েছি বলি মনে মনে যে মনেরে ছলি, ধরা পড়িনু সংসারেতে করিতে তব কাজ। কেমনে মুখ সমুখে তব তুলিব আমি আজ॥ জানি নে, নাথ, আমার ঘরে ঠাঁই কোথা যে তোমারি তরে— নিজেরে তব চরণ’পরে সঁপি নি রাজরাজ! তোমারে চেয়ে দিবসযামী আমারি পানে তাকাই আমি— তোমারে চোখে দেখি নে, স্বামী, তব মহিমামাঝ। কেমনে মুখ সমুখে তব তুলিব আমি আজ॥
৪৯৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৪ ভয় হয় পাছে তব নামে আমি আমারে করি প্রচার হে। মোহবশে পাছে ঘিরে আমায় তব নামগান-অহঙ্কার হে॥ তোমার কাছে কিছু নাহি তো লুকানো, অন্তরের কথা তুমি সব জানো— আমি কত দীন, আমি কত হীন, কেহ নাহি জানে আর হে॥ ক্ষুদ্র কণ্ঠে যবে উঠে তব নাম বিশ্ব শুনে তোমায় করে গো প্রণাম— তাই আমার পাছে জাগে অভিমান, গ্রাসে আমায় আঁধার হে, পাছে প্রতারণা করি আপনারে তোমার আসনে বসাই আমারে— রাখো মোহ হতে, রাখো তম হতে, রাখো রাখো বারবার হে॥
৪৯৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৫ আজি প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে। তুমি আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তরমাঝে॥ হৃদয়দেবতা রয়েছ প্রাণে মন যেন তাহা নিয়ত জানে, পাপের চিন্তা মরে যেন দহি দুঃসহ লাজে॥ সব কলরবে সারা দিনমান শুনি অনাদি সঙ্গীতগান, সবার সঙ্গে অবিরত তোমার সঙ্গ রাজে। নিমেষে নিমেষে নয়নে বচনে, সকল কর্মে, সকল মননে, সকল হৃদয়তন্ত্রে যেন মঙ্গল বাজে॥
৪৯৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৬ যে-কেহ মোরে দিয়েছ সুখ দিয়েছ তাঁরি পরিচয়, সবারে আমি নমি। যে-কেহ মোরে দিয়েছ দুখ দিয়েছ তাঁরি পরিচয়, সবারে আমি নমি॥ যে-কেহ মোরে বেসেছ ভালো জ্বেলেছ ঘরে তাঁহারি আলো, তাঁহারি মাঝে সবারই আজি পেয়েছি আমি পরিচয়, সবারে আমি নমি॥ যা-কিছু কাছে এসেছে, আছে, এনেছে তাঁরে প্রাণে, সবারে আমি নমি। যা-কিছু দূরে গিয়েছে ছেড়ে টেনেছে তাঁরি পানে, সবারে আমি নমি। জানি বা আমি নাহি বা জানি, মানি বা আমি নাহি বা মানি, নয়ন মেলি নিখিলে আমি পেয়েছি তাঁরি পরিচয়, সবারে আমি নমি॥
৪৯৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
কে জানিত তুমি ডাকিবে আমারে, ছিলাম নিদ্রামগন। সংসার মোরে মহামোহঘোরে ছিল সদা ঘিরে সঘন॥ আপনার হাতে দিবে যে বেদনা, ভাসাবে নয়নজলে, কে জানিত হবে আমার এমন শুভদিন শুভলগন॥ জানি না কখন করুণা-অরুণ উঠিল উদয়াচলে, দেখিতে দেখিতে কিরণে পুরিল আমার হৃদয়গগন॥ তোমার অমৃতসাগর হইতে বন্যা আসিল কবে, হৃদয়ে বাহিরে যত বাঁধ ছিল কখন হইল ভগন॥ সুবাতাস তুমি আপনি দিয়েছ, পরানে দিয়েছ আশা— আমার জীবনতরণী হইবে তোমার চরণে মগন॥
৪৯৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৮ জীবনে আমার যত আনন্দ পেয়েছি দিবস-রাত সবার মাঝারে আজিকে তোমারে স্মরিব জীবননাথ॥ যে দিন তোমার জগত নিরখি হরষে পরান উঠিছে পুলকি সে দিন আমার নয়নে হয়েছে তোমারি নয়নপাত॥ বারে বারে তুমি আপনার হাতে স্বাদে সৌরভে গানে বাহির হইতে পরশ করেছ অন্তরমাঝখানে। পিতা মাতা ভ্রাতা সব পরিবার, মিত্র আমার, পুত্র আমার, সকলের সাথে প্রবেশি হৃদয়ে তুমি আছ মোর সাথ॥
৪৯৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৪৯৯ আঁখিজল মুছাইলে জননী— অসীম স্নেহ তব, ধন্য তুমি গো, ধন্য ধন্য তব করুণা॥ অনাথ যে তারে তুমি মুখ তুলে চাহিলে, মলিন যে তারে বসাইলে পাশে— তোমার দুয়ার হতে কেহ না ফিরে যে আসে অমৃতপিয়াসে॥ দেখেছি আজি তব প্রেমমুখহাসি, পেয়েছি চরণচ্ছায়া। চাহি-না আর-কিছু—পূরেছে কামনা, ঘুচেছে হৃদয়বেদনা॥
৫০০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০০ তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে, তুমি ধন্য ধন্য হে। আমার প্রাণ তোমারি দান, তুমি ধন্য ধন্য হে॥ পিতার বক্ষে রেখেছ মোরে, জনম দিয়েছ জননীত্রোড়ে, বেঁধেছ সখার প্রণয়ডোরে, তুমি ধন্য ধন্য হে॥ তোমার বিশাল বিপুল ভুবন করেছ আমার নয়নলোভন— নদী গিরি বন সরসশোভন, তুমি ধন্য ধন্য হে॥ হৃদয়ে-বাহিরে স্বদেশে-বিদেশে যুগে-যুগান্তে নিমেষে-নিমেষে জনমে-মরণে শোকে-আনন্দে তুমি ধন্য ধন্য হে॥
৫০১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০১ হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা, হে বন্ধু আমার, সে পুণ্যতীর্থের যিনি জাগ্রত দেবতা তাঁরে নমস্কার॥ বিশ্বলোক নিত্য যাঁর শাশ্বত শাসনে মরণ উত্তীর্ণ হয় প্রতি ক্ষণে ক্ষণে, আবর্জনা দূরে যায় জরাজীর্ণতার, তাঁরে নমস্কার॥ যুগান্তের বহ্নিস্নানে যুগান্তর দিন নির্মল করেন যিনি, করেন নবীন, ক্ষয়েশষে পরিপূর্ণ করেন সংসার, তাঁরে নমস্কার। পথযাত্রী জীবনের দুঃখে সুখে ভরি অজানা উদ্দেশ-পানে চলে কালতরী, ক্লান্তি তার দূর করি করিছেন পার, তাঁরে নমস্কার॥
৫০২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০২ ফুল বলে, ধন্য আমি মাটির ’পরে, দেবতা ওগো, তোমার সেবা আমার ঘরে॥ জন্ম নিয়েছি ধূলিতে দয়া করে দাও ভুলিতে, নাই ধূলি মোর অন্তরে॥ নয়ন তোমার নত করো, দলগুলি কাঁপে থরোথরো। চরণপরশ দিয়ো দিয়ো, ধূলির ধনকে করো স্বর্গীয়— ধরার প্রণাম আমি তোমার তরে॥
৫০৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৩ নমি নমি চরণে, নমি কলুষহরণে॥ সুধারসনির্ঝর হে, নমি নমি চরণে। নমি চিরনির্ভর হে মোহগহনতরণে॥ নমি চিরমঙ্গল হে, নমি চিরসম্বল হে। উদিল তপন, গেল রাত্রি, নমি নমি চরণে। জাগিল অমৃতপথযাত্রী— নমি চিরপথসঙ্গী, নমি নিখিলশরণে॥ নমি সুখে দুঃখে ভয়ে, নমি জয়পরাজয়ে। অসীম বিশ্বতলে নমি নমি চরণে। নমি চিতকমলদলে নিবিড় নিভৃত নিলয়ে, নমি জীবনে মরণে॥
৫০৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৪ একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারে সকল দেহ লুটিয়ে পড়ুক তোমার এ সংসারে॥ ঘন শ্রাবণমেঘের মতো রসের ভারে নম্র নত একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারে সমস্ত মন পড়িয়া থাক্ তব ভবনদ্বারে॥ নানা সুরের আকুল ধারা মিলিয়ে দিয়ে আত্মহারা একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারে সমস্ত গান সমাপ্ত হোক নীরব পারাবারে। হংস যেমন মানসযাত্রী তেমনি সারা দিবসরাত্রি একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারে সমস্ত প্রাণ উড়ে চলুক মহামরণ-পারে॥
৫০৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৫ তোমারি নামে নয়ন মেলিনু পুণ্যপ্রভাতে আজি, তোমারি নামে খুলিল হৃদয়শতদলদলরাজি॥ তোমারি নামে নিবিড় তিমিরে ফুটিল কনকলেখা, তোমারি নামে উঠিল গগনে কিরণবীণা বাজি। তোমারি নামে পূর্বতোরণে খুলিল সিংহদ্বার, বাহিরিল রবি নবীন আলোকে দীপ্ত মুকুট মাজি। তোমারি নামে জীবনসাগরে জাগিল লহরীলীলা, তোমারি নামে নিখিল ভুবন বাহিরে আসিল সাজি॥
৫০৬
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৬ অনিমেষ আঁখি সেই কে দেখেছে যে আঁখি জগতপানে চেয়ে রয়েছে॥ রবি শশী গ্রহ তারা হয় নাকো দিশাহারা, সেই আঁখি ’পরে তারা আঁখি রেখেছে॥ তরাসে আঁধারে কেন কাঁদিয়া বেড়াই, হৃদয়-আকাশ-পানে কেন না তাকাই? ধ্রুবজ্যোতি সে নয়ন জাগে সেথা অনুক্ষণ, সংসারের মেঘে বুঝি দৃষ্টি ঢেকেছে॥
৫০৭
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৭ মম অঙ্গনে স্বামী আনন্দে হাসে, সুগন্ধ ভাসে আনন্দ-রাতে॥ খুলে দাও দুয়ার সব, সবারে ডাকো ডাকো, নাহি রেখো কোথাও কোনো বাধা— অহো, আজি সঙ্গীতে মন প্রাণ মাতে॥
৫০৮
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৮ আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে ঘন রজনী নীরবে নিবিড়গম্ভীরে॥ জাগো আজি জাগো, জাগো রে তাঁরে লয়ে প্রেমঘন হৃদয়মন্দিরে॥
৫০৯
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫০৯ কেমনে রাখিবি তোরা তাঁরে লুকায়ে চন্দ্রমা তপন তারা আপন আলোকছায়ে॥ হে বিপুল সংসার, সুখে দুখে আঁধার, কত কাল রাখিবি ঢাকি তাঁহারে কুহেলিকায়। আত্মা-বিহারী তিনি, হৃদয়ে উদয় তাঁর— নব নব মহিমা জাগে, নব নব কিরণ ভায়॥
৫১০
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১০ হে নিখিলভারধারণ বিশ্ববিধাতা, হে বলদাতা মহাকালরথসারথি॥ তব নামজপমালা গাঁথে রবি শশী তারা, অনন্ত দেশ কাল জপে দিবারাতি॥
৫১১
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১১ দেবাধিদেব মহাদেব! অসীম সম্পদ, অসীম মহিমা॥ মহাসভা তব অনন্ত আকাশে। কোটি কণ্ঠ গাহে জয় জয় জয় হে॥
৫১২
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১২ দিন ফুরালো হে সংসারী, ডাকো তাঁরে ডাকো যিনি শ্রান্তিহারী॥ ভোলো সব ভবভাবনা, হৃদয়ে লহো হে শান্তিবারি॥
৫১৩
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১৩ জরজর প্রাণে, নাথ, বরিষন করো তব প্রেমসুধা— নিবারো এ হৃদয়দহন॥ করো হে মোচন করো সব পাপমোহ, দূর করো বিষয়বাসনা॥
৫১৪
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১৪ কোথায় তুমি, আমি কোথায়, জীবন কোন্ পথে চলিছে নাহি জানি॥ নিশিদিন হেনভাবে আর কতকাল যাবে— দীননাথ, পদতলে লহো টানি॥
৫১৫
পূজা - বিবিধ
পূজা - বিবিধ
৫১৫ সকল গর্ব দূর করি দিব, তোমার গর্ব ছাড়িব না। সবারে ডাকিয়া কহিব যে দিন পাব তব পদরেণুকণা॥ তব আহ্বান আসিবে যখন সে কথা কেমনে করিব গোপন॥ সকল বাক্যে সকল কর্মে প্রকাশিবে তব আরাধনা॥ যত মান আমি পেয়েছি যে কাজে সে দিন সকলই যাবে দূরে, শুধু তব মান দেহে মনে মোর বাজিয়া উঠিবে এক সুরে। পথের পথিক সেও দেখে যাবে তোমার বারতা মোর মুখভাবে ভবসংসারবাতায়নতলে বসে রব যবে আনমনা॥