৫১৬
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫১৬ এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর! পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর সুন্দর হে সুন্দর॥ আলোকে মোর চক্ষুদুটি মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি, হৃদ্গগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর সুন্দর হে সুন্দর॥ এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত, এই তোমারি মিলনসুধা রইল প্রাণে সঞ্চিত। তোমার মাঝে এমনি ক’রে নবীন করি লও যে মোরে এই জনমে ঘটালে মোর জন্ম-জনমান্তর সুন্দর হে সুন্দর॥
৫১৭
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫১৭ সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত— স্বর্ণে রত্নে শোভন লোভন জানি, বর্ণে বর্ণে রচিত॥ খড়্গ তোমার আরো মনোহর লাগে বাঁকা বিদ্যুতে আঁকা সে গরুড়ের পাখা রক্ত রবির রাগে যেন গো অস্ত-আকাশে॥ জীবনশেষের শেষজাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা— নিমেষে দহিয়া যাহা-কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা। সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত— খড়্গ তোমার, হে দেব বজ্রপাণি, চরম শোভায় রচিত॥
৫১৮
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫১৮ আলো যে আজ গান করে মোর প্রাণে গো। কে এল মোর অঙ্গনে কে জানে গো॥ হৃদয় আমার উদাস করে কেড়ে নিল আকাশ মোরে, বাতাস আমায় আনন্দবাণ হানে গো॥ দিগন্তের ওই নীল নয়নের ছায়াতে কুসুম যেন বিকাশে মোর কায়াতে। মোর হৃদয়ের সুগন্ধ যে বাহির হল কাহার খোঁজে, সকল জীবন চাহে কাহার পানে গো॥
৫১৯
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫১৯ মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দরবেশে এসেছ, তোমায় করি গো নমস্কার। মোর অন্ধকারের অন্তরে তুমি হেসেছ, তোমায় করি গো নমস্কার। এই নম্র নীরব সৌম্য গভীর আকাশে তোমায় করি গো নমস্কার। এই শান্ত সুধীর তন্দ্রানিবিড় বাতাসে তোমায় করি গো নমস্কার। এই ক্লান্ত ধরার শ্যামলাঞ্চল-আসনে তোমায় করি গো নমস্কার। এই স্তব্ধ তারার মৌনমন্ত্রভাষণে তোমায় করি গো নমস্কার। এই কর্ম-অন্তে নিভৃত পান্থশালাতে তোমায় করি গো নমস্কার। এই গন্ধগহন-সন্ধ্যাকুসুম-মালাতে তোমায় করি গো নমস্কার॥
৫২০
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২০ এই তো তোমার আলোকধেনু সূর্য তারা দলে দলে— কোথায় ব’সে বাজাও বেণু, চরাও মহাগগনতলে॥ তৃণের সারি তুলছে মাথা, তরুর শাখে শ্যামল পাতা— আলোয়-চরা ধেনু এরা ভিড় করেছে ফুলে ফলে॥ সকালবেলা দূরে দূরে উড়িয়ে ধূলি কোথায় ছোটে, আঁধার হলে সাঁঝের সুরে ফিরিয়ে আনে আপন গোঠে। আশা তৃষা আমার যত ঘুরে বেড়ায় কোথায় কত— মোর জীবনের রাখাল ওগো, ডাক দেবে কি সন্ধ্যা হলে?।
৫২১
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২১ যদি প্রেম দিলে না প্রাণে কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে?। কেন তারার মালা গাঁথা, কেন ফুলের শয়ন পাতা, কেন দখিন-হাওয়া গোপন কথা জানায় কানে কানে?। যদি প্রেম দিলে না প্রাণে কেন আকাশ তবে এমন চাওয়া চায় এ মুখের পানে? তবে ক্ষণে ক্ষণে কেন আমার হৃদয় পাগল-হেন তরী সেই সাগরে ভাসায় যাহার কূল সে নাহি জানে?।
৫২২
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২২ মহারাজ, একি সাজে এলে হৃদয়পুরমাঝে! চরণতলে কোটি শশী সূর্য মরে লাজে॥ গর্ব সব টুটিয়া মূর্ছি পড়ে লুটিয়া, সকল মম দেহ মন বীণাসম বাজে॥ একি পুলকবেদনা বহিছে মধুবায়ে! কাননে যত পুষ্প ছিল মিলিল তব পায়ে। পলক নাহি নয়নে, হেরি না কিছু ভুবনে— নিরখি শুধু অন্তরে সুন্দর বিরাজে॥
৫২৩
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৩ হৃদয়শশী হৃদিগগনে উদিল মঙ্গললগনে, নিখিল সুন্দর ভুবনে একি এ মহামধুরিমা॥ ডুবিল কোথা দুখ সুখ রে অপার শান্তির সাগরে, বাহিরে অন্তরে জাগে রে শুধুই সুধাপুরনিমা॥ গভীর সঙ্গীত দ্যুলোকে ধ্বনিছে গম্ভীর পুলকে, গগন-অঙ্গন-আলোকে উদার দীপদীপ্তিমা। চিত্তমাঝে কোন্ যন্ত্রে কী গান মধুময় মন্ত্রে বাজে রে অপরূপ তন্ত্রে, প্রেমের কোথা পরিসীমা॥
৫২৪
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৪ আমারে দিই তোমার হাতে নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥ দিনে দিনেই ফুল যে ফোটে, তেমনি করেই ফুটে ওঠে জীবন তোমার আঙিনাতে নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥ বিচ্ছেদেরই ছন্দে লয়ে মিলন ওঠে নবীন হয়ে। আলো-অন্ধকারের তীরে হারায়ে পাই ফিরে ফিরে, দেখা আমার তোমার সাথে নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥
৫২৫
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
কে গো অন্তরতর সে! আমার চেতনা আমার বেদনা তারি সুগভীর পরশে॥ আঁখিতে আমার বুলায় মন্ত্র, বাজায় হৃদয়বীণার তন্ত্র, কত আনন্দে জাগায় ছন্দ কত সুখে দুখে হরষে॥ সোনালি রুপালি সবুজে সুনীলে সে এমন মায়া কেমনে গাঁথিলে— তারি সে আড়ালে চরণ বাড়ালে, ডুবালে সে সুধাসরসে। কত দিন আসে, কত যুগ যায়, গোপনে গোপনে পরান ভুলায়, নানা পরিচয়ে নানা নাম ল’য়ে নিতি নিতি রস বরষে॥
৫২৬
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৬ এই-যে তোমার প্রেম, ওগো হৃদয়হরণ, এই-যে পাতায় আলো নাচে সোনার বরন॥ এই-যে মধুর আলসভরে মেঘ ভেসে যায় আকাশ ’পরে, এই-যে বাতাস দেহে করে অমৃতক্ষরণ॥ প্রভাত-আলোর ধারায় আমার নয়ন ভেসেছে। এই তোমারি প্রেমের বাণী প্রাণে এসেছে। তোমারি ওই মুখ নুয়েছে, মুখে আমার চোখ থুয়েছে, আমার হৃদয় আজ ছুঁয়েছে তোমারি চরণ॥
৫২৭
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৭ তোমারি মধুর রূপে ভরেছ ভুবন— মুগ্ধ নয়ন মম, পুলকিত মোহিত মন॥ তরুণ অরুণ নবীনভাতি, পূর্ণিমাপ্রসন্ন রাতি, রূপরাশি-বিকশিত-তনু কুসুমবন॥ তোমা-পানে চাহি সকলে সুন্দর, রূপ হেরি আকুল অন্তর। তোমারে ঘেরিয়া ফিরে নিরন্তর তোমার প্রেম চাহি। উঠে সঙ্গীত তোমার পানে, গগন পূর্ণ প্রেমগানে, তোমার চরণ করেছে বরণ নিখিলজন॥
৫২৮
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৮ লহো লহো, তুলে লহো নীরব বীণাখানি। তোমার নন্দননিকুঞ্জ হতে সুর দেহো তায় আনি ওহে সুন্দর হে সুন্দর॥ আমি আঁধার বিছায়ে আছি রাতের আকাশে তোমারি আশ্বাসে। তারায় তারায় জাগাও তোমার আলোক-ভরা বাণী ওহে সুন্দর হে সুন্দর॥ পাষাণ আমার কঠিন দুখে তোমায় কেঁদে বলে, ‘পরশ দিয়ে সরস করো, ভাসাও অশ্রুজলে, ওহে সুন্দর হে সুন্দর।’ শুষ্ক যে এই নগ্ন মরু নিত্য মরে লাজে আমার চিত্তমাঝে, শ্যামল রসের আঁচল তাহার বক্ষে দেহো টানি ওহে সুন্দর হে সুন্দর॥
৫২৯
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫২৯ ডাকিল মোরে জাগার সাথি। প্রাণের মাঝে বিভাস বাজে, প্রভাত হল আঁধার রাতি॥ বাজায় বাঁশি তন্দ্রা-ভাঙা, ছড়ায় তারি বসন রাঙা— ফুলের বাসে এই বাতাসে কী মায়াখানি দিয়েছে গাঁথি॥ গোপনতম অন্তরে কী লেখনরেখা দিয়েছে লেখি! মন তো তারি নাম জানে না, রূপ আজিও নয় যে চেনা, বেদনা মম বিছায়ে দিয়ে রেখেছি তারি আসন পাতি॥
৫৩০
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩০ ওহে সুন্দর, মরি মরি, তোমায় কী দিয়ে বরণ করি॥ তব ফাল্গুন যেন আসে আজি মোর পরানের পাশে, দেয় সুধারসধারে-ধারে মম অঞ্জলি ভরি ভরি॥ মধু সমীর দিগঞ্চলে আনে পুলকপূজাঞ্জলি— মম হৃদয়ের পথতলে যেন চঞ্চল আসে চলি। মম মনের বনের শাখে যেন নিখিল কোকিল ডাকে, যেন মঞ্জরীদীপশিখা নীল অম্বরে রাখে ধরি॥
৫৩১
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩১ তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে। জমল ধুলা প্রাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে॥ নাই যে কুসুম, মালা গাঁথব কিসে! কান্নার গান বীণায় এনেছি যে, দূর হতে তাই শুনতে পাবে অন্ধকারে সুন্দর হে॥ দিনের পরে দিন কেটে যায় সুন্দর হে। মরে হৃদয় কোন্ পিপাসায় সুন্দর হে। শূন্য ঘাটে আমি কী-যে করি— রঙিন পালে কবে আসবে তরী, পাড়ি দেব কবে সুধারসের পারাবারে সুন্দর হে॥
৫৩২
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩২ তুমি সুন্দর, যৌবনঘন রসময় তব মূর্তি, দৈন্যভরণ বৈভব তব অপচয়পরিপূর্তি॥ নৃত্য গীত কাব্যছন্দ কলগুঞ্জন বর্ণ গন্ধ— মরণহীন চিরনবীন তব মহিমাস্ফুর্তি॥
৫৩৩
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৩ ওই মরণের সাগরপারে চুপে চুপে এলে তুমি ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥ কান্না আমার সারা প্রহর তোমায় ডেকে ঘুরেছিল চারি দিকের বাধায় ঠেকে, বন্ধ ছিলেম এই জীবনের অন্ধকূপে— আজ এসেছ ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥ আজ কী দেখি কালো চুলের আঁধার ঢালা, তারি স্তরে স্তরে সন্ধ্যাতারার মানিক জ্বালা। আকাশ আজি গানের ব্যথায় ভরে আছে, ঝিল্লিরবে কাঁপে তোমার পায়ের কাছে, বন্দনা তোর পুষ্পবনের গন্ধধূপে— আজ এসেছ ভুবনমোহন স্বপনরূপে॥
৫৩৪
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৪ ওগো সুন্দর, একদা কী জানি কোন্ পুণ্যের ফলে আমি বনফুল তোমার মালায় ছিলাম তোমার গলে॥ তখন প্রভাতে প্রথম তরুণ আলো ঘুম-ভাঙা চোখে ধরার লেগেছে ভালো, বিভাসে ললিতে নবীনের বীণা বেজেছে জলে স্থলে॥ আজি এ ক্লান্ত দিবসের অবসানে লুপ্ত আলোয়, পাখির সুপ্ত গানে, শ্রান্তি-আবেশে যদি অবশেষে ঝরে ফুল ধরাতলে— সন্ধ্যাবাতাসে অন্ধকারের পারে পিছে পিছে তব উড়ায়ে চলুক তারে, ধুলায় ধুলায় দীর্ণ জীর্ণ না হোক সে পলে পলে॥
৫৩৫
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৫ রুদ্রবেশে কেমন খেলা, কালো মেঘের ভ্রূকুটি! সন্ধ্যাকাশের বক্ষ যে ওই বজ্রবাণে যায় টুটি॥ সুন্দর হে, তোমায় চেয়ে ফুল ছিল সব শাখা ছেয়ে, ঝড়ের বেগে আঘাত লেগে ধুলায় তারা যায় লুটি॥ মিলনদিনে হঠাৎ কেন লুকাও তোমার মাধুরী! ভীরুকে ভয় দেখাতে চাও, একি দারুণ চাতুরী! যদি তোমার কঠিন ঘায়ে বাঁধন দিতে চাও ঘুচায়ে কঠোর বলে টেনে নিয়ে বক্ষে তোমার দাও ছুটি॥
৫৩৬
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৬ জাগে নাথ জোছনারাতে— জাগো, রে অন্তর, জাগো॥ তাঁহারি পানে চাহো মুগ্ধপ্রাণে নিমেষহারা আঁখিপাতে॥ নীরব চন্দ্রমা নীরব তারা, নীরব গীতরসে হল হারা— জাগে বসুন্ধরা, অম্বর জাগে রে— জাগে রে সুন্দর সাথে॥
৫৩৭
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৭ সুন্দর বহে আনন্দমন্দানিল, সমুদিত প্রেমচন্দ্র, অন্তর পুলকাকুল॥ কুঞ্জে কুঞ্জে জাগিছে বসন্ত পুণ্যগন্ধ, শূন্যে বাজিছে রে অনাদি বীণাধ্বনি॥ অচল বিরাজ করে শশীতারামণ্ডিত সুমহান সিংহাসনে ত্রিভুবনেশ্বর॥ পদতলে বিশ্বলোক রোমাঞ্চিত, জয় জয় গীত গাহে সুরনর॥
৫৩৮
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৮ চিরদিবস নব মাধুরী, নব শোভা তব বিশ্বে— নব কুসুমপল্লব, নব গীত, নব আনন্দ॥ নব জ্যোতি বিভাসিত, নব প্রাণ বিকাশিত নবপ্রীতিপ্রবাহহিল্লোলে॥ চারিদিকে চিরদিন নবীন লাবণ্য, তব প্রেমনয়নছটা। হৃদয়স্বামী, তুমি চিরপ্রবীণ, তুমি চিরনবীন, চিরমঙ্গল, চিরসুন্দর॥
৫৩৯
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৩৯ একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে, আনন্দবসন্তসমাগমে॥ বিকশিত প্রীতিকুসুম হে পুলকিত চিতকাননে॥ জীবনলতা অবনতা তব চরণে। হরষগীত উচ্ছসিত হে কিরণমগন গগনে॥
৫৪০
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪০ আজি হেরি সংসার অমৃতময়। মধুর পবন, বিমল কিরণ, ফুল্ল বন, মধুর বিহগকলধ্বনি॥ কোথা হতে বহিল সহসা প্রাণভরা প্রেমহিল্লোল, আহা— হৃদয়কুসুম উঠিল ফুটি পুলকভরে॥ অতি আশ্চর্য দেখো সবে, দীনহীন ক্ষুদ্র হৃদয়মাঝে অসীম জগতস্বামী বিরাজে সুন্দর শোভন! ধন্য এই মানবজীবন, ধন্য বিশ্বজগত, ধন্য তাঁর প্রেম, তিনি ধন্য ধন্য॥
৫৪১
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪১ প্রভাতে বিমল আনন্দে বিকশিত কুসুমগন্ধে বিহঙ্গমগীতছন্দে তোমার আভাস পাই॥ জাগে বিশ্ব তব ভবনে প্রতিদিন নব জীবনে, অগাধ শূন্য পূরে কিরণে, খচিত নিখিল বিচিত্র বরনে— বিরল আসনে বসি তুমি সব দেখিছ চাহি॥ চারি দিকে করে খেলা বরন-কিরণ-জীবন-মেলা, কোথা তুমি অন্তরালে! অন্ত কোথায়, অন্ত কোথায়—অন্ত তোমার নাহি নাহি॥
৫৪২
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪২ একি সুগন্ধহিল্লোল বহিল আজি প্রভাতে, জগত মাতিল তায়॥ হৃদয়মধুকর ধাইছে দিশি দিশি পাগলপ্রায়॥ বরন-বরন পুষ্পরাজি হৃদয় খুলিয়াছে আজি, সেই সুরভিসুধা করিছে পান পূরিয়া প্রাণ, সে সুধা করিছে দান— সে সুধা অনিলে উথলি যায়॥
৫৪৪
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪৪ মধুর রূপে বিরাজ হে বিশ্বরাজ, শোভন সভা নিরখি মন প্রাণ ভুলে॥ নীরব নিশি সুন্দর, বিমল নীলাম্বর, শুচিরুচির চন্দ্রকলা চরণমূলে॥
৫৪৫
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪৫ রহি রহি আনন্দতরঙ্গ জাগে— রহি রহি, প্রভু, তব পরশমাধুরী হৃদয়মাঝে আসি লাগে। রহি রহি শুনি তব চরণপাত হে মম পথের আগে আগে। রহি রহি মম মনোগগন ভাতিল তব প্রসাদরবিরাগে॥
৫৪৩
পূজা - সুন্দর
পূজা - সুন্দর
৫৪৩ একি এ সুন্দর শোভা! কী মুখ হেরি এ! আজি মোর ঘরে আইল হৃদয়নাথ, প্রেম-উৎস উথলিল আজি॥ বলো হে প্রেমময় হৃদয়ের স্বামী, কী ধন তোমারে দিব উপহার। হৃদয় প্রাণ লহো লহো তুমি, কী বলিব— যাহা-কিছু আছে মম সকলই লও হে নাথ॥