৫৮৪
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৮৪ যা পেয়েছি প্রথম দিনে সেই যেন পাই শেষে, দু হাত দিয়ে বিশ্বেরে ছুঁই শিশুর মতো হেসে॥ যাবার বেলা সহজেরে যাই যেন মোর প্রণাম সেরে, সকল পন্থা যেথায় মেলে সেথা দাঁড়াই এসে॥ খুঁজতে যারে হয় না কোথাও চোখ যেন তায় দেখে, সদাই যে রয় কাছে তারি পরশ যেন ঠেকে। নিত্য যাহার থাকি কোলে তারেই যেন যাই গো ব’লে— এই জীবনে ধন্য হলেম তোমায় ভালোবেসে॥
৫৮৫
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৮৫ জয় জয় পরমা নিষ্কৃতি হে, নমি নমি। জয় জয় পরমা নির্বৃতি হে, নমি নমি॥ নমি নমি তোমারে হে অকস্মাৎ, গ্রন্থিচ্ছেদন খরসংঘাত— লুপ্তি, সুপ্তি, বিস্মৃতি হে, নমি নমি॥ অশ্রুশ্রাবণপ্লাবন হে, নমি নমি। পাপক্ষালন পাবন হে, নমি নমি॥ সব ভয় ভ্রম ভাবনার চরমা আবৃতি হে, নমি নমি॥
৫৮৬
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৮৬ আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে। বলে শুধু, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে॥ আমি যে তোর আলোর ছেলে, আমার সামনে দিলি আঁধার মেলে, মুখ লুকালি— মরি আমি সেই খেদে॥ অন্ধকারে অস্তরবির লিপি লেখা, আমারে তার অর্থ শেখা। তোর প্রাণের বাঁশির তান সে নানা সেই আমারই ছিল জানা, আজ মরণ-বীণার অজানা সুর নেব সেধে॥
৫৮৭
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৮৭ মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে আবার ব্যথার টানে নিকটে ফিরাবে ব’লে॥ আঁধার-আলোর পারে খেয়া দিই বারে বারে, নিজেরে হারায়ে খুঁজি— দুলি সেই দোলে দোলে॥ সকল রাগিণী বুঝি বাজাবে আমার প্রাণে— কভু ভয়ে কভু জয়ে, কভু অপমানে মানে। বিরহে ভরিবে সুরে তাই রেখে দাও দূরে, মিলনে বাজিবে বাঁশি তাই টেনে আন কোলে॥
৫৮৮
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৮৮ রজনীর শেষ তারা, গোপনে আঁধারে আধো-ঘুমে বাণী তব রেখে যাও প্রভাতের প্রথম কুসুমে॥ সেইমত যিনি এই জীবনের আনন্দরূপিণী শেষক্ষণে দেন যেন তিনি নবজীবনের মুখ চুমে॥ এই নিশীথের স্বপ্নরাজি নবজাগরণক্ষণে নব গানে উঠে যেন বাজি। বিরহিণী যে ছিল রে মোর হৃদয়ের মর্ম-মাঝে বধূবেশে সেই যেন সাজে নবদিনে চন্দনে কুঙ্কুমে॥
৫৮৯
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
কোন্ খেলা যে খেলব কখন ভাবি বসে সেই কথাটাই— তোমার আপন খেলার সাথি করো, তা হলে আর ভাবনা তো নাই॥ শিশির-ভেজা সকালবেলা আজ কি তোমার ছুটির খেলা— বর্ষণহীন মেঘের মেলা তার সনে মোর মনকে ভাসাই॥ তোমার নিঠুর খেলা খেলবে যে দিন বাজবে সে দিন ভীষণ ভেরী— ঘনাবে মেঘ, আঁধার হবে, কাঁদবে হাওয়া আকাশ ঘেরি। সে দিন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে— অকাতরে পরানটাকে প্রলয়দোলায় দোলাতে চাই॥
৫৯০
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯০ অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে? অচেনাকেই চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে॥ জানি জানি আমার চেনা কোনো কালেই ফুরাবে না, চিহ্নহারা পথে আমায় টানবে অচিন ডোরে॥ ছিল আমার মা অচেনা, নিল আমায় কোলে। সকল প্রেমই অচেনা গো, তাই তো হৃদয় দোলে। অচেনা এই ভুবন-মাঝে কত সুরেই হৃদয় বাজে— অচেনা এই জীবন আমার, বেড়াই তারি ঘোরে॥
৫৯১
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯১ আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে দুঃখসুখের-ঢেউ-খেলানো এই সাগরের তীরে॥ আবার জলে ভাসাই ভেলা, ধুলার ’পরে করি খেলা গো, হাসির মায়ামৃগীর পিছে ভাসি নয়ননীরে॥ কাঁটার পথে আঁধার রাতে আবার যাত্রা করি, আঘাত খেয়ে বাঁচি নাহয় আঘাত খেয়ে মরি। আবার তুমি ছদ্মবেশে আমার সাথে খেলাও হেসে গো, নূতন প্রেমে ভালোবাসি আবার ধরণীরে॥
৫৯২
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯২ পুষ্প দিয়ে মারো যারে চিনল না সে মরণকে। বাণ খেয়ে যে পড়ে সে যে ধরে তোমার চরণকে॥ সবার নিচে ধুলার ’পরে ফেলো যারে মৃত্যুশরে সে যে তোমার কোলে পড়ে, ভয় কি বা তার পড়নকে?। আরামে যার আঘাত ঢাকা, কলঙ্ক যার সুগন্ধ, নয়ন মেলে দেখল না সে রুদ্র মুখের আনন্দ। মজল না সে চোখের জলে, পৌঁছল না চরণতলে, তিলে তিলে পলে পলে ম’ল যেজন পালঙ্কে॥
৫৯৩
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৩ মেঘ বলেছে ‘যাব যাব’, রাত বলেছে ‘যাই’, সাগর বলে ‘কূল মিলেছে—আমি তো আর নাই’॥ দুঃখ বলে ‘রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে’, আমি বলে ‘মিলাই আমি আর কিছু না চাই’॥ ভুবন বলে ‘তোমার তরে আছে বরণমালা’, গগন বলে ‘তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা’। প্রেম বলে যে ‘যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে’, মরণ বলে ‘আমি তোমার জীবনতরী বাই’॥
৫৯৪
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৪ জানি গো, দিন যাবে এ দিন যাবে। একদা কোন্ বেলাশেষে মলিন রবি করুণ হেসে শেষ বিদায়ের চাওয়া আমার মুখের পানে চাবে॥ পথের ধারে বাজবে বেণু, নদীর কূলে চরবে ধেনু, আঙিনাতে খেলবে শিশু, পাখিরা গান গাবে— তবুও দিন যাবে এ দিন যাবে॥ তোমার কাছে আমার এ মিনতি যাবার আগে জানি যেন আমায় ডেকেছিল কেন আকাশ-পানে নয়ন তুলে শ্যামল বসুমতী কেন নিশার নীরবতা শুনিয়েছিল তারার কথা, পরানে ঢেউ তুলেছিল কেন দিনের জ্যোতি— তোমার কাছে আমার এই মিনতি॥ সাঙ্গ যবে হবে ধরার পালা যেন আমার গানের শেষে থামতে পারি সমে এসে, ছয়টি ঋতুর ফুলে ফলে ভরতে পারি ডালা। এই জীবনের আলোকেতে পারি তোমায় দেখে যেতে, পরিয়ে যেতে পারি তোমায় আমার গলার মালা— সাঙ্গ যবে হবে ধরার পালা॥
৫৯৫
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৫ অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়। কণাটুকু যদি হারায় তা লয়ে প্রাণ করে ‘হায় হায়’॥ নদীতটসম কেবলই বৃথাই প্রবাহ আঁকড়ি রাখিবারে চাই, একে একে বুকে আঘাত করিয়া ঢেউগুলি কোথা ধায়॥ যাহা যায় আর যাহা-কিছু থাকে সব যদি দিই সঁপিয়া তোমাকে তবে নাহি ক্ষয়, সবই জেগে রয় তব মহা মহিমায়। তোমাতে রয়েছে কত শশী ভানু, হারায় না কভু অণু পরমাণু, আমারই ক্ষুদ্র হারাধনগুলি রবে না কি তব পায়॥
৫৯৬
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৬ তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই— কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই॥ মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ, তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই॥ হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে— নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই। অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে কোথা একাকার জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই॥
৫৯৭
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৭ আমি আছি তোমার সভার দুয়ার-দেশে, সময় হলেই বিদায় নেব কেঁদে হেসে॥ মালায় গেঁথে যে ফুলগুলি দিয়েছিলে মাথায় তুলি পাপড়ি তাহার পড়বে ঝরে দিনের শেষে॥ উচ্চ আসন না যদি রয় নামব নীচে, ছোটো ছোটো গানগুলি এই ছড়িয়ে পিছে। কিছু তো তার রইবে বাকি তোমার পথের ধুলা ঢাকি, সবগুলি কি সন্ধ্যা-হাওয়ায় যাবে ভেসে?।
৫৯৮
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৮ পেয়েছি ছুটি, বিদায় দেহো ভাই— সবারে আমি প্রণাম করে যাই॥ ফিরায়ে দিনু দ্বারের চাবি, রাখি না আর ঘরের দাবি— সবার আজি প্রসাদবাণী চাই॥ অনেক দিন ছিলাম প্রতিবেশী, দিয়েছি যত নিয়েছি তার বেশি। প্রভাত হয়ে এসেছে রাতি, নিবিয়া গেল কোণের বাতি— পড়েছে ডাক, চলেছি আমি তাই॥
৫৯৯
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৫৯৯ আমার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর্। ভোরের আকাশ রাঙা হল রে, আমার পথ হল সুন্দর॥ কী নিয়ে বা যাব সেথা ওগো তোরা ভাবিস নে তা, শূন্য হাতেই চলব বহিয়ে আমার ব্যাকুল অন্তর॥ মালা প’রে যাব মিলনবেশে, আমার পথিকসজ্জা নয়। বাধা বিপদ আছে মাঝের দেশে, মনে রাখি নে সেই ভয়। যাত্রা যখন হবে সারা উঠবে জ্বলে সন্ধ্যাতারা, পুরবীতে করুণ বাঁশরি দ্বারে বাজবে মধুর স্বর॥
৬০০
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০০ আঁধার এল ব’লে তাই তো ঘরে উঠল আলো জ্বলে॥ ভুলেছিলেম দিনে, রাতে নিলেম চিনে— জেনেছি কার লীলা আমার বক্ষোদোলার দোলে॥ ঘুমহারা মোর বনে বিহঙ্গগান জাগল ক্ষণে ক্ষণে। যখন সকল শব্দ হয়েছে নিস্তব্ধ বসন্তবায় মোরে জাগায় পল্লবকল্লোলে॥
৬০১
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০১ দিন যদি হল অবসান নিখিলের অন্তরমন্দিরপ্রাঙ্গণে ওই তব এল আহ্বান॥ চেয়ে দেখো মঙ্গলরাতি জ্বালি দিল উৎসববাতি, স্তব্ধ এ সংসারপ্রান্তে ধরো ধরো তব বন্দনগান॥ কর্মের-কলরব-ক্লান্ত, করো তব অন্তর শান্ত। চিত্ত-আসন দাও মেলে, নাই যদি দর্শন পেলে আঁধারে মিলিবে তাঁর স্পর্শ— হর্ষে জাগায়ে দিবে প্রাণ॥
৬০২
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০২ তোমার হাতের অরুণলেখা পাবার লাগি রাতারাতি স্তব্ধ আকাশ জাগে একা পুবের পানে বক্ষ পাতি॥ তোমার রঙিন তুলির পাকে নামাবলীর আঁকন আঁকে, তাই নিয়ে তো ফুলের বনে হাওয়ায় হাওয়ায় মাতামাতি॥ এই কামনা রইল মনে—গোপনে আজ তোমায় কব পড়বে আঁকা মোর জীবনে রেখায় রেখায় আখর তব। দিনের শেষে আমায় যবে বিদায় নিয়ে যেতেই হবে তোমার হাতের লিখনমালা সুরের সুতোয় যাব গাঁথি॥
৬০৩
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৩ দিনের বেলায় বাঁশি তোমার বাজিয়েছিলে অনেক সুরে— গানের পরশ প্রাণে এল, আপনি তুমি রইলে দূরে॥ শুধাই যত পথের লোকে ‘এই বাঁশিটি বাজালো কে’— নানান নামে ভোলায় তারা, নানান দ্বারে বেড়াই ঘুরে॥ এখন আকাশ ম্লান হল, ক্লান্ত দিবা চক্ষু বোজে— পথে পথে ফেরাও যদি মরব তবে মিথ্যা খোঁজে। বাহির ছেড়ে ভিতরেতে আপনি লহো আসন পেতে— তোমার বাঁশি বাজাও আসি আমার প্রাণের অন্তঃপুরে॥
৬০৪
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৪ মধুর, তোমার শেষ যে না পাই প্রহর হল শেষ— ভুবন জুড়ে রইল জেগে আনন্দ-আবেশ॥ দিনান্তের এই এক কোণাতে সন্ধ্যামেঘের শেষ সোনাতে মন যে আমার গুঞ্জরিছে কোথায় নিরুদ্দেশ॥ সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হাওয়ার ’পরে অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গ ভরে। এই গোধূলির ধূসরিমায় শ্যামল ধরার সীমায় সীমায় শুনি বনে বনান্তরে অসীম গানের রেশ॥
৬০৫
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৫ দিন অবসান হল। আমার আঁখি হতে অস্তরবির আলোর আড়াল তোলো॥ অন্ধকারের বুকের কাছে নিত্য-আলোর আসন আছে, সেথায় তোমার দুয়ারখানি খোলো॥ সব কথা সব কথার শেষে এক হয়ে যাক মিলিয়ে এসে। স্তব্ধ বাণীর হৃদয়-মাঝে গভীর বাণী আপনি বাজে, সেই বাণীটি আমার কানে বোলো॥
৬০৬
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৬ শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে? আঘাত হয়ে দেখা দিল, আগুন হয়ে জ্বলবে॥ সাঙ্গ হলে মেঘের পালা শুরু হবে বৃষ্টি-ঢালা, বরফ-জমা সারা হলে নদী হয়ে গলবে॥ ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে, অন্ধকারের পেরিয়ে দুয়ার যায় চলে আলোকে। পুরাতনের হৃদয় টুটে আপনি নূতন উঠবে ফুটে, জীবনে ফুল ফোটা হলে মরণে ফল ফলবে॥
৬০৭
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৭ রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপরতন আশা করি, ঘাটে ঘাটে ঘুরব না আর ভাসিয়ে আমার জীর্ণ তরী॥ সময় যেন হয় রে এবার ঢেউ-খাওয়া সব চুকিয়ে দেবার, সুধায় এবার তলিয়ে গিয়ে অমর হয়ে রব মরি॥ যে গান কানে যায় না শোনা সে গান যথায় নিত্য বাজে প্রাণের বীণা নিয়ে যাব সেই অতলের সভা-মাঝে॥ চিরদিনের সুরটি বেঁধে শেষ গানে তার কান্না কেঁদে নীরব যিনি তাঁহার পায়ে নীরব বীণা দিব ধরি॥
৬০৮
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৮ কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়? জয় অজানার জয়। এই দিকে তোর ভরসা যত, ওই দিকে তোর ভয়! জয় অজানার জয়॥ জানাশোনার বাসা বেঁধে কাটল তো দিন হেসে কেঁদে, এই কোণেতেই আনাগোনা নয় কিছুতেই নয়। জয় অজানার জয়॥ মরণকে তুই পর করেছিস ভাই, জীবন যে তোর তুচ্ছ হল তাই। দু দিন দিয়ে ঘেরা ঘরে তাইতে যদি এতই ধরে, চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়? জয় অজানার জয়॥
৬০৯
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬০৯ জয় ভৈরব, জয় শঙ্কর! জয় জয় জয় প্রলয়ঙ্কর, শঙ্কর শঙ্কর॥ জয় সংশয়ভেদন, জয় বন্ধনছেদন, জয় সঙ্কটসংহর শঙ্কর শঙ্কর॥ তিমিরহৃদ্বিদারণ জ্বলদগ্নিনিদারুণ, মরুশ্মশানসঞ্চর শঙ্কর শঙ্কর! বজ্রঘোষবাণী, রুদ্র, শূলপাণি, মৃত্যুসিন্ধুসন্তর শঙ্কর শঙ্কর॥
৬১০
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১০ আগুনে হল আগুনময়। জয় আগুনের জয়॥ মিথ্যা যত হৃদয় জুড়ে এইবেলা সব যাক-না-পুড়ে, মরণ-মাঝে তোর জীবনের হোক রে পরিচয়॥ আগুন এবার চলল রে সন্ধানে কলঙ্ক তোর লুকিয়ে আছে প্রাণে। আড়াল তোমার যাক রে ঘুচে, লজ্জা তোমার যাক রে মুছে, চিরদিনের মতো তোমার ছাই হয়ে যাক ভয়॥
৬১১
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১১ ওরে, আগুন আমার ভাই, আমি তোমারই জয় গাই। তোমার ওই শিকল-ভাঙা এমন রাঙা মূর্তি দেখি নাই॥ তুমি দু হাত তুলে আকাশ-পানে মেতেছ আজ কিসের গানে, একি আনন্দময় নৃত্য অভয় বলিহারি যাই॥ যেদিন ভবের মেয়াদ ফুরোবে ভাই, আগল যাবে সরে— সেদিন হাতের দড়ি, পায়ের বেড়ি, দিবি রে ছাই করে। সেদিন আমার অঙ্গ তোমার অঙ্গে ওই নাচনে নাচবে রঙ্গে— সকল দাহ মিটবে দাহে, ঘুচবে সব বালাই॥
৬১২
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১২ দুঃখ যে তোর নয় রে চিরন্তন— পার আছে রে এই সাগরের বিপুল ক্রন্দন॥ এই জীবনের ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত, চিরপ্রাণের আলয়-মাঝে অনন্ত সান্ত্বন॥ মরণ যে তোর নয় রে চিরন্তন— দুয়ার তাহার পেরিয়ে যাবি, ছিঁড়বে রে বন্ধন। এ বেলা তোর যদি ঝড়ে পূজার কুসুম ঝ’রে পড়ে, যাবার বেলায় ভরবে থালায় মালা ও চন্দন॥
৬১৩
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১৩ মরণসাগরপারে তোমরা অমর, তোমাদের স্মরি। নিখিলে রচিয়া গেলে আপনারই ঘর, তোমাদের স্মরি॥ সংসারে জ্বেলে গেলে যে নব আলোক জয় হোক, জয় হোক, তারি জয় হোক— তোমাদের স্মরি॥ বন্দীরে দিয়ে গেছ মুক্তির সুধা, তোমাদের স্মরি। সত্যের বরমালে সাজালে বসুধা, তোমাদের স্মরি। রেখে গেলে বাণী সে যে অভয় অশোক, জয় হোক, জয় হোক, তারি জয় হোক— তোমাদের স্মরি॥
৬১৪
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১৪ যেতে যদি হয় হবে— যাব, যাব, যাব তবে॥ লেগেছিল কত ভালো এই-যে আঁধার আলো— খেলা করে সাদা কালো উদার নভে। গেল দিন ধরা-মাঝে কত ভাবে, কত কাজে, সুখে দুখে কভু লাজে, কভু গরবে॥ প্রাণপণে কত দিন শুধেছি কঠিন ঋণ, কখনো বা উদাসীন ভুলেছি সবে। কভু ক’রে গেনু খেলা, স্রোতে ভাসাইনু ভেলা, আনমনে কত বেলা কাটানু ভবে॥ জীবন হয় নি ফাঁকি, ফলে ফুলে ছিল ঢাকি, যদি কিছু রহে বাকি কে তাহা লবে! দেওয়া-নেওয়া যাবে চুকে, বোঝা-খসে-যাওয়া বুকে যাব চলে হাসিমুখে—যাব নীরবে॥
৬১৫
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১৫ পথের শেষ কোথায়, শেষ কোথায়, কী আছে শেষে! এত কামনা, এত সাধনা কোথায় মেশে?। ঢেউ ওঠে পড়ে কাঁদার, সম্মুখে ঘন আঁধার, পার আছে গো পার আছে— পার আছে কোন্ দেশে?। আজ ভাবি মনে মনে, মরীচিকা-অন্বেষণে হায় বুঝি তৃষ্ণার শেষ নেই। মনে ভয় লাগে সেই— হাল-ভাঙা পাল-ছেঁড়া ব্যথা চলেছে নিরুদ্দেশে॥
৬১৬
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১৬ যাত্রাবেলায় রুদ্র রবে বন্ধনডোর ছিন্ন হবে। ছিন্ন হবে, ছিন্ন হবে॥ মুক্ত আমি, রুদ্ধদ্বারে বন্দী করে কে আমারে! যাই চলে যাই অন্ধকারে ঘণ্টা বাজায় সন্ধ্যা যবে॥
৬১৭
পূজা - শেষ
পূজা - শেষ
৬১৭ আজকে মোরে বোলো না কাজ করতে, যাব আমি দেখাশোনার নেপথ্যে আজ সরতে ক্ষণিক মরণ মরতে॥ অচিন কূলে পাড়ি দেব, আলোকলোকে জন্ম নেব, মরণরসে অলখঝোরায় প্রাণের কলস ভরতে॥ অনেক কালের কান্নাহাসির ছায়া ধরুক সাঁঝের রঙিন মেঘের মায়া। আজকে নাহয় একটি বেলা ছাড়ব মাটির দেহের খেলা, গানের দেশে যাব উড়ে সুরের দেহ ধরতে॥