ভেজাল
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়, ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়! ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা, ‘কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা।’ ভেজাল পোশাক ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা, ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা। ভেজাল কথা— বাংলাতে ইংরেজী ভেজাল চলছে, ভেজাল দেওয়া সত্যি কথা লোকেরা আজ বলছে। ‘খাঁটি জিনিষ’ এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে, ‘ভেজাল’ নামটা খাঁটি কেবল আর সকলই মিথ্যে। কলিতে ভাই ‘ভেজাল’ সত্য ভেজাল ছাড়া গতি নেই, ছড়াটাতেও ভেজাল দিলাম, ভেজাল দিলে ক্ষতি নেই॥
বিয়ে বাড়ির মজা
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
বিয়ে বাড়ি: বাজছে সানাই, বাজছে নানান বাদ্য একটি ধারে তৈরী হচ্ছে নানা রকম খাদ্য; হৈ-চৈ আর চেঁচামেচি, আসছে লুচির গন্ধ, আলোয় আলোয় খুলি সবাই, কান্নাকাটি বন্ধ, বাসরঘরে সাজছে ক’নে, সবাই উৎফুল্ল, লোকজনকে আসতে দেখে কর্তার মুখ খুলল: “আসুন, আসুন— বসুন সবাই, আজকে হলাম ধন্য, যৎসামান্য এই আয়োজন আপনাদেরই জন্য; মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টি খাবার সময় এদের প্রতি দেবেন একটু দৃষ্টি।” বর আসেনি, তাই সকলে ব্যস্ত এবং উৎসুক, আনন্দে আজ বুক সকলের নাচছে কেবল ধুক-ধুক, ‘হুলু’ দিতে তৈরি সবাই, শাঁক হাতে সব প্রস্তুত, সময় চলে যাচ্ছে ব’লে মনটা করছে খুঁত-খুঁত! ভাবছে সবাই কেমন ক’রে বরকে করবে জব্দ; হঠাৎ পাওয়া গেল পথের মোড়ে গাড়ির শব্দ: হুলুধ্বনি উঠল মেতে, শাঁক বাজল জোরে, বরকে সবাই এগিয়ে নিতে গেল পথের মোড়ে। কোথায় বরের সাজসজ্জা, কোথায় ফুলের মালা? সবাই হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে, পালা, পালা, পালা। বর নয়কো, লাল-পাগড়ি পুলিশ আসছে নেমে। বিয়েবাড়ির লোকগুলো সব হঠাৎ উঠল ঘেমে, বললে পুলিশ: এই কি কর্তা, ক্ষুদ্র আয়োজন? পঞ্চাশ জনে কোথায়? এ যে দেখছি হাজার জন! এমনি করে চাল নষ্ট দুর্ভিক্ষের কালে? থানায় চলো, কাজ কি এখন এইখানে গোলমালে? কর্তা হলেন কাঁদো কাঁদো, চোখেতে জল আসে, গেটের পাশে জড়ো-হওয়া কাঙালীরা হাসে॥
মেয়েদের পদবী
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
মেয়েদের পদবীতে গোলমাল ভারী, অনেকের নামে তাই দেখি বাড়াবাড়ি; ‘আ’কার অন্ত দিয়ে মহিলা করার চেষ্টা হাসির। তাই ভূমিকা ছড়ার। ‘গুপ্ত’ ‘গুপ্তা’ হয় মেয়েদের নামে, দেখছি অনেক চিঠি, পোস্টকার্ড, খামে। সে নিয়মে যদি আজ ‘ঘোষ’ হয় ‘ঘোষা’, তা হলে অনেক মেয়ে করবেই গোসা, ‘পালিত’ ‘পালিতা’ হলে ‘পাল’ হলে ‘পালা’ নির্ঘাৎ বাড়বেই মেয়েদের জ্বালা; ‘মল্লিক’ ‘মল্লিকা’, ‘দাস’ হলে ‘দাসা’, শোনাবে পদবীগুলো অতিশয় খাসা; ‘কর’ যদি ‘করা’ হয়, ‘ধর’ হয় ‘ধরা’ মেয়েরা দেখবে এই পৃথিবীটা— “সরা”, ‘নাগ’ যদি ‘নাগা’ হয় ‘সেন’ হয় ‘সেনা’, বড়ই কঠিন হবে মেয়েদের চেনা॥
অতি কিশোরের ছড়া
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
তোমরা আমায় নিন্দে ক’রে দাও না যতই গালি, আমি কিন্তু মাখছি আমার গালেতে চুনকালি, কোনো কাজটাই পারি নাকো বলতে পারি ছড়া, পাশের পড়া পড়ি না ছাই পড়ি ফেলের পড়া। তেতো ওষুধ গিলি নাকো, মিষ্টি এবং টক খাওয়ার দিকেই জেনো আমার চিরকালের সখ। বাবা-দাদা সবার কাছেই গোঁয়ার এবং মন্দ, ভাল হয়ে থাকার সঙ্গে লেগেই আছে দ্বন্দ্ব। পড়তে ব’সে থাকে আমার পথের দিকে চোখ, পথের চেয়ে পথের লোকের দিকেই বেশী ঝোঁক। হুলের কেয়ার করি নাকো মধুর জন্য ছুটি, যেখানে ভিড় সেখানেতেই লাগাই ছোটাছুটি। পন্ডিত এবং বিজ্ঞজনের দেখলে মাথা নাড়া, ভাবি উপদেশের ষাড়ে করলে বুঝি তারা। তাইতো ফিরি ভয়ে ভয়ে, দেখলে পরে তর্ক, বুঝি কেবল গোময় সেটা,— নয়কো মধুপর্ক। ভুল করি ভাই যখন তখন, শোধরাবার আহ্লাদে খেয়ালমতো কাজ ক’রে যাই, কষ্ট পাই কি সাধে? সোজাসুজি যা হয় বুঝি, হায় অদৃষ্ট চক্র! আমার কথা বোঝে না কেউ পৃথিবীটাই বক্র॥
পুরনো ধাঁধাঁ
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
বলতে পারো বড়মানুষ মোটর কেন চড়বে? গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে? বড় মানুষ ভোজের পাতে ফেলে লুচি-মিষ্টি, গরীবরা পায় খোলামকুচি, একি অনাসৃষ্টি? বলতে পার ধনীর বাড়ি তৈরি যারা করছে, কুঁড়েঘরেই তারা কেন মাছির মতো মরছে? ধনীর মেয়ের দামী পুতুল হরেক রকম খেলনা, গরীব মেয়ে পায় না আদর, সবার কাছে ফ্যালনা। বলতে পার ধনীর মুখে যারা যোগায় খাদ্য, ধনীর পায়ের তলায় তারা থাকতে কেন বাধ্য? ‘হিং-টিং-ছট্’ প্রশ্ন এসব, মাথার মধ্যে কামড়ায়, বড়লোকের ঢাক তৈরী গরীব লোকের চামড়ায়॥
সিপাহী বিদ্রোহ
মিঠেকড়া
মিঠেকড়া
হঠাৎ দেশে উঠল আওয়াজ— “হো-হো, হো-হো, হো-হো” চমকে সবাই তাকিয়ে দেখে— সিপাহী বিদ্রোহ! আগুন হয়ে সারাটা দেশ ফেটে পড়ল রাগে, ছেলে বুড়ো জেগে উঠল নব্বই সন আগে: একশো বছর গোলামিতে সবাই তখন ক্ষিপ্ত, বিদেশীদের রক্ত পেলে তবেই হবে তৃপ্ত! নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী— সবার হাতে অস্ত্র, নাচে বনের পশু-পক্ষী। কেবল ধনী, জমিদার আর আগের রাজার ভক্ত যোগ দিল, তা নয়কো, দিল গরীবেরাও রক্ত! সবাই জীবন তুচ্ছ করে, মুসলমান ও হিন্দু, সবাই দিতে রাজি তাদের প্রতি রক্তবিন্দু; ইতিহাসের পাতায় তোমরা পড় কেবল মিথ্যে, বিদেশীরা ভুল বোঝাতে চায় তোমাদের চিত্তে। অত্যাচারী নয়কো তারা, অত্যাচারীর মুণ্ড চেয়েছিল ফেলতে ছিঁড়ে জ্বালিয়ে অগ্নিকুণ্ড। নানা জাতের নানান সেপাই গরীব এবং মূর্খ: সবাই তারা বুঝেছিল অধীনতার দুঃখ; তাইতো তারা স্বাধীনতার প্রথম লড়াই লড়তে এগিয়েছিল, এগিয়েছিল মরণ বরণ করতে! আজকে যখন স্বাধীন হবার শেষ লড়াইয়ের ডঙ্কা উঠছে বেজে, কোনোদিকেই নেইকো কোনো শঙ্কা; জব্বলপুরে সেপাইদেরও উঠছে বেজে বাদ্য নতুন ক’রে বিদ্রোহ আজ, কেউ নয়কো বাধ্য, তখন এঁদের স্মরণ করো, স্মরণ করো নিত্য— এঁদের নামে, এঁদের পণে শানিয়ে তোলো চিত্ত। নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী, এঁদের নামে, দৃপ্ত কিশোর, খুলবে তোমার চোখ কি?