(ভূমিকা)
খাই খাই
খাই খাই
এসব কথা শুন্লে তোদের লাগবে মনে ধাঁধা, কেউ বা বুঝে পুরোপুরি কেউ বা বুঝে আধা। কারে বা কই কিসের কথা, কই যে দফে দফে, গাছের ’পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে। একটি একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান, মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সাবান। বেশ বলেছ, ঢের বলেছ, ঐখেনে দাও দাঁড়ি হাটের মাঝে ভাঙ্বে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি!
দাঁড়ের কবিতা
খাই খাই
খাই খাই
চুপ কর্ শোন্ শোন্, বেয়াকুফ হোস্ নে ঠেকে গেছি বাপ্ রে কি ভয়ানক প্রশ্নে! ভেবে ভেবে লিখে লিখে বসে বসে দাঁড়েতে ঝিম্ঝিম্ টন্টন্ ব্যথা করে হাড়েতে। এক ছিল দাঁড়ি মাঝি— দাড়ি তার মস্ত, দাড়ি দিয়ে দাঁড়ি তার দাঁড়ে খালি ঘষ্ত। সেই দাঁড়ে একদিন দাঁড়কাক দাঁড়াল, কাঁকড়ার দাঁড়া দিয়ে দাঁড়ি তারে তাড়াল। কাক বলে রেগেমেগে, “বাড়াবাড়ি ঐতো! না দাঁড়াই দাঁড়ে তবু দাঁড়কাক হই তো? ভারি তোর দাঁড়িগিরি, শোন্ বলি তবে রে— দাঁড় বিনা তুই ব্যাটা দাঁড়ি হোস্ কবে রে? পাখা হলে ‘পাখি’ হয় ব্যাকরণ বিশেষে— কাঁকড়ার দাঁড়া আছে, দাঁড়ি নয় কিসে সে? দ্বারে বসে দারোয়ান, তারে যদি ‘দ্বারী’ কয়, দাঁড়ে-বসা যত পাখি সব তবে দাঁড়ি হয়! দূর দূর! ছাই দাঁড়ি! দাড়ি নিয়ে পাড়ি দে!” দাঁড়ি বলে, “বাস্ বাস্! ঐখেনে দাঁড়ি দে।”
পাকাপাকি
খাই খাই
খাই খাই
TODO আম পাকে বৈশাখে কুল পাকে ফাগুনে, কাঁচা ইঁট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে। রোদে জলে টিকে রঙ, পাকা কই তাহারে; ফলারটি পাকা হয় লুচি দই আহারে। হাত পাকে লিখে লিখে, চুল পাকে বয়সে, জ্যাঠামিতে পাকা ছেলে বেশি কথা কয় সে। লোকে কয় কাঁঠাল সে পাকে নাকি কিলিয়ে? বুদ্ধি পাকিয়ে তোলে লেখাপড়া গিলিয়ে! কান পাকে ফোড়া পাকে, পেকে করে টন্টন্- কথা যার পাকা নয়, কাজে তার ঠন্ঠন্ রাঁধুনী বসিয়া পাকে পাক দেয় হাঁড়িতে, সজোরে পাকালে চোখ ছেলে কাঁদে বাড়িতে। পাকায়ে পাকায়ে দড়ি টান হয়ে থাকে সে। দুহাতে পাকালে গোঁফ তবু নাহি পাকে সে।
খাই খাই
খাই খাই
খাই খাই
খাই খাই করো কেন, এসো বসো আহারে— খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে। যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে, জড় করে আনি সব— থাক সেই আশাতে। ডাল ভাত তরকারি ফল-মূল শস্য, আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য, রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি, ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি, আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে— খুঁজে পেতে আনি খেতে— নয় বড়ো সিধে সে! জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়, জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিয়ো। ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা, জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা। ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ), বার্মার ‘ঙাপ্পি’তে বাপ্ রে কি গন্ধ! মান্দ্রাজী ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ, জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট! আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা, কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা। দেখে শুনে চেয়ে খাও, যেটা চায় রসনা; তা না হলে কলা খাও— চটো কেন? বসো না— সবে হল খাওয়া শুরু, শোনো শোনো আরো খায়— সুদ খায় মহাজনে, ঘুষ খায় দারোগায়। বাবু যান হাওয়া খেতে চড়ে জুড়ি-গাড়িতে, খাসা দেখ ‘খাপ্ খায়’ চাপ্কানে দাড়িতে। তেলে জলে ‘মিশ খায়’, শুনেছ তা কেও কি? যুদ্ধে যে গুলি খায় গুলিখোর সেও কি? ডিঙি চড়ে স্রোতে প’ড়ে পাক খায় জেলেরা, ভয় পেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা; বেত খেয়ে কাঁদে কেউ, কেউ শুধু গালি খায়, কেউ খায় থতমত— তাও লিখি তালিকায়। ভিখারিটা তাড়া খায়, ভিখ্ নাহি পায় রে— ‘দিন আনে দিন খায়’ কত লোক হায় রে। হোঁচটের চোট্ খেয়ে খোকা ধরে কান্না মা বলেন চুমু খেয়ে, ‘সেরে গেছে, আর না।’ ধমক বকুনি খেয়ে নয় যারা বাধ্য কিলচড় লাথি ঘুঁষি হয় তার খাদ্য। জুতো খায় গুঁতো খায়, চাবুক যে খায় রে, তবু যদি নুন খায় সেও গুণ গায় রে। গরমে বাতাস খাই, শীতে খাই হিম্সিম্, পিছলে আছাড় খেয়ে মাথা করে ঝিম্ঝিম্। কত যে মোচড় খায় বেহালার কানটা, কানমলা খেলে তবে খোলে তার গানটা। টোল খায় ঘটি বাটি, দোল খায় খোকারা, ঘাব্ড়িয়ে ঘোল খায় পদে পদে বোকারা। আকাশেতে কাৎ হ’য়ে গোঁৎ খায় ঘুড়িটা, পালোয়ান খায় দেখ ডিগ্বাজি কুড়িটা। ফুটবলে ঠেলা খাই, ভিড়ে খাই ধাক্কা, কাশীতে প্রসাদ খেয়ে সাধু হই পাক্কা। কথা শোনো, মাথা খাও, রোদ্দুরে যেও না— আর যাহা খাও বাপু বিষমটি খেয়ো না। ‘ফেল্’ ক’রে মুখ খেয়ে কেঁদেছিলে সেবারে, আদা-নুন খেয়ে লাগো পাশ করো এবারে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ো নাকো; যেয়ো নাকো ভড়্কে, খাওয়াদাওয়া শেষ হলে বসে খাও খড়্কে। এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা— খাও তবে কচুপোড়া খাও তবে ঘণ্টা।
পড়ার হিসাব
খাই খাই
খাই খাই
ফিরল সবাই ইস্কুলেতে সাঙ্গ হল ছুটি— আবার চলে বই বগলে সবাই গুটি গুটি। পড়ার পরে কার কি রকম মনটি ছিল এবার, সময় এল এখন তারই হিসেবখানা দেবার। কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প, কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প। কেউ-বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া, কেউ-বা কেবল কাঁচুমাচু মোটে না দেয় সাড়া। গুরুমশাই এসেই ক্লাসে বলেন, ‘ওরে গদাই, এবার কিছু পড়লি? নাকি খেলতি কেবল সদাই?’ গদাই ভয়ে চোখ পাকিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে শেষে বল্লে, ‘এবার পড়ার ঠেলা বেজায় সর্বনেশে— মামার বাড়ি যেম্নি যাওয়া অম্নি গাছে চড়া, এক্কেবারে অম্নি ধপাস্— পড়ার মতো পড়া!’
বিষম চিন্তা
খাই খাই
খাই খাই
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার— সবাই বলে “মিথ্যে বাজে বকিস নে আর খবরদার!” অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব? বলবে সবাই, “মুখ্যু ছেলে”, বলবে আমায় “গো-গর্দভ!” কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর? বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোত্থেকে হয় এমন জোর? গাধার কেন শিং থাকে না? হাতির কেন পালক নেই? গরম তেলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তা ধেই-ধেই? সোডার বোতল খুল্লে কেন ফঁসফঁসিয়ে রাগ করে? কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাক পড়ে? ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়? মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়? কতই ভাবি এ-সব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই? বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই।
পরিবেষণ
খাই খাই
খাই খাই
‘পরি’পূর্বক ‘বিষ’ধাতু তাহে ‘অনট্’ ব’সে তবে ঘটায় পরিবেষণ, লেখে অমরকোষে। —অর্থাৎ ভোজের ভাণ্ড হাতে লয়ে মেলা ডেলা ডেলা ভাগ করি পাতে পাতে ফেলা। এই দিকে এসো তবে লয়ে ভোজভাণ্ড সমুখে চাহিয়া দেখ কি ভীষণ কাণ্ড! কেহ কহে “দৈ আন” কেহ হাঁকে “লুচি” কেহ কাঁদে শূন্য মুখে পাতখানি মুছি। কোথা দেখি দুই প্রভু পাত্র লয়ে হাতে হাতাহাতি গুঁতাগুঁতি দ্বন্দরণে মাতে। কেবা শোনে কার কথা সকলেই কর্তা— অনাহারে কতধারে হল প্রাণ হত্যা। কোনো প্রভু হস্তিদেহ ভুঁড়িখানা ভারী উর্ধ্ব হতে থপ্ করি খাদ্য দেন্ ছাড়ি। কোনো চাচা অন্ধপ্রায় (‘মাইনাস কুড়ি’) ছড়ায় ছোলার ডাল পথঘাট জুড়ি। মাতব্বর বৃদ্ধ যায় মুদি চক্ষু দুটি, “কারো কিছু চাই” বলি তড়্ বড়্ ছুটি— সহসা ডালের পাঁকে পদার্পণ মাত্রে হুড়্ মুড়্ পড়ে কার নিরামিষ পাত্রে। বীরোচিত ধীর পদে এসো দেখি ত্রস্তে— ঐ দিকে খালি পাত, চল হাঁড়ি হস্তে। তবে দেখো, খাদ্য দিতে অতিথির থালে দৈবাৎ না ঢোকে কভু যেন নিজ গালে! ছুটো নাকো ওরকম মিছে খালি হাতে দিয়ো না মাছের মুড়া নিরামিষ পাতে। অযথা আক্রোশে কিম্বা অন্যায় আদরে ঢেলো না অম্বল কারো নূতন চাদরে। বোকাবৎ দন্তপাটি করিয়া বাহির কোরো না অকারণে কৃতিত্ব জাহির।
আড়ি
খাই খাই
খাই খাই
কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে— বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে। শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি, সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী! আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনোদিন্ সে? কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয়। তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি? ছ্যাঁক্ ছ্যাঁক্ রাগ যেন খেতে আসে এখনি। তার চেয়ে বেশি আড়ি পারি আমি কহিতে— তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে।
অবুঝ
খাই খাই
খাই খাই
TODO চুপ করে থাক্, তর্ক করার বদভ্যাসটি ভাল না, এক্কেবারেই হয় না ওতে বুদ্ধিশক্তির চালনা। দেখ্ ত দেখি আজও আমার মনের তেজটি নেভেনি- এইবার শোন বলছি এখন- কি বলছিলাম ভেবে নি! বলছিলাম কি, আমি একটা বই লিখেছি কবিতার, উচু রকম পদ্যে লেখা আগাগোড়াই সবি তার । তাইতে আছে "দশমুখে চায়,হ জম করে দশোদর, শ্মশানঘাটে শষপানি খায় শশব্যস্ত শশধর।" এই কথাটার অর্থ যে কি ,ভাবছে না কেউ মোটেও- বুঝছে না কেউ লাভ হবে কি, অর্থ যদি জোটেও। এরই মধ্যে হাই তুলিস যে? পুতে ফেলব এখনি, ঘুঘু দেখেই নাচতে শুরু, ফাঁদ ত বাবা দেখনি! কি বললি তুই? সাতান্নবার শুনেছিস্ ঐ কথাটা? এমন মিথ্যা কইতে পারিস্ লক্ষ্মীছাড়া বখাটা! আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধ্যি নেই কো পেরোবার হিসেব দেব বলেছি এই চোদ্দবার কি তেরোবার। সাতান্ন তুই গুনতে পারিস? মিথ্যেবাদী! গুনে যা- ও শ্যামাদাস! পালাস্ কেন? রাগ করিনি, শুনে যা।
অসম্ভব নয়
খাই খাই
খাই খাই
TODO এক যে ছিল সাহেব, তাহার গুণের মধ্যে নাকের বাহার। তার যে গাধা বাহন, সেটা যেমন পেটুক তেমনি ঢ্যাঁটা। ডাইনে বল্লে যায় সে বামে তিন পা যেতে দুবার থামে । চল্তে চল্তে থেকে থেকে খানায় খন্দে পড়ে বেঁকে। ব্যাপার দেখে এম্নিতরো সাহেব বললে "সবুর করো- মাম্দোবাজি আমার কাছে? এ রোগেরও ওষুধ আছে।" এই না বলে ভীষন ক্ষেপে গাধার পিঠে বস্ল চেপে মুলোর ঝুটি ঝুলিয়ে নাকে আর কি গাধা ঝিমিয়ে থাকে? মুলোর গন্ধে টগবগিয়ে দৌড়ে চলে লম্ফ দিয়ে - যতই ছোটে "ধরব" ব’লে ততই মুলো এগিয়ে চলে ! খাবার লোভে উদাস প্রাণে কেবল ছোটে মুলোর টানে - ডাইনে বাঁয়ে মুলোর তালে ফেরেন গাধা নাকের চালে।
নাচের বাতিক
খাই খাই
খাই খাই
TODO বয়স হল অষ্টআশি, চিমসে গায়ে ঠুন্কো হাড়, নাচছে বুড়ো উল্টোমাথায়- ভাঙলে বুঝি মুন্ডু ঘাড়! হেঁইয়ো ব’লে হাত পা ছেড়ে পড়ছে তেড়ে চিৎপটাং, উঠছে আবার ঝট্পটিয়ে এক্কেবারে পিঠ সটান্। বুঝিয়ে বলি, “বৃদ্ধ তুমি এই বয়েসে কর্ছ কি? খাও না খানিক মশলা গুলে হুঁকোর জল আর হরতকী। ঠান্ডা হবে মাথায় আগুন, শান্ত হবে ছটফ্টি-” বৃদ্ধ বলে, “থাম্ না বাপু সব তাতে তোর পট্পটি! ঢের খেয়েছি মশ্লা পাঁচন, ঢের মেখেছি চর্বি তেল, তুই ভেবেছিস আমায় এখন চাল্ মেরে তুই করবি ফেল?” এই না ব’লে ডাইনে বাঁয়ে লম্ফ দিয়ে হুশ ক’রে হঠাৎ খেয়ে উল্টোবাজি ফেললে আমায় ‘পুশ’ করে। “নাচলে অমন উল্টো রকম”, আবার বলি বুঝিয়ে তায়, “রক্তগুলো হুড়হুড়িয়ে মগজ পানে উজিয়ে যায়।” বললে বুড়ো, “কিন্তু বাবা, আসল কথা সহজ এই- ঢের দেখেছি পরখ্ করে কোথাও আমার মগজ নেই। তাইতে আমরা হয় না কিছু- মাথায় যে সব ফক্কিফাঁক- যতটা নাচি উল্টো নাচন, যতই না খাই চর্কিপাক।” বলতে গেলাম “তাও কি হয়”- অম্নি হঠাৎ ঠ্যাং নেড়ে আবার বুড়ো হুড়মুড়িয়ে ফেললে আমায় ল্যাং মেরে। ভাবছি সবে মারব ঘুঁষি এবার বুড়োর রগ্ ঘেঁষে, বললে বুড়ো “করব কি বল্? করায় এ সব অভ্যেসে। ছিলাম যখন রেল-দারোগা চড়্তে হত ট্রেইনেতে চলতে গিয়ে ট্রেনগুলো সব পড়ত প্রায়ই ড্রেইনেতে। তুব্ড়ে যেত রেলের গাড়ি লাগত গুঁতো চাক্কাতে, ছিটকে যেতাম যখন তখন হঠাৎ এক এক ধাক্কাতে। নিত্যি ঘুমাই এক চোখে তাই, নড়লে গাড়ি- অম্নি ’বাপ্- এম্-নি ক’রে ডিগ্বাজিতে এক্কেবারে শুন্য লাফ। তাইতে হল নাচের নেশা, হঠাৎ হঠাৎ নাচন পায়, বসতে শুতে আপ্নি ভুলে ডিগ্বাজি খাই আচমকায়! নাচতে গিয়ে দৈবে যদি ঠ্যাং লাগে তোর পাজরাতে, তাই বলে কি চটতে হবে? কিম্বা রাগে গজ্রাতে?” আমিও বলি, “ঘাট হয়েছে তোমার খুরে দন্ডবৎ! লাফাও তুমি যেমন খুশি, আমরা দেখি অন্য পথ।”
কাজের লোক
খাই খাই
খাই খাই
TODO প্রথম। বাঃ - আমার নাম ’বাঃ’, বসে থাকি তোফা তুলে পায়ের উপর পা! লেখাপড়ার ধার ধারিনে , বছর ভরে ছুটি, হেসে খেলে আরাম ক’রে দুশো মজা লুটি। কারে কবে কেয়ার করি , কিসের করি ডর? কাজের নামে কম্প দিয়ে গায়ে আসে জ্বর। গাধার মতন খাটিস্ তোরা মুখটা করে চুন- আহাম্মুকি কান্ড দেখে হেসেই আমি খুন। সকলে। আস্ত একটি গাধা তুমি স্পষ্ট গেল দেখা, হাস্ছ যত, কান্না তত কপালেতে লেখা। দ্বিতীয়। ’যদি’ বলে ডাকে আমায় নামটি আমার যদি - আশায় আশায় বসে থাকি হেলনা দিয়ে গদি। সব কাজেতে থাকতে যদি খেলার মত মজা, লেখাপড়া হত যদি জলের মত সোজা - স্যান্ডো সমান ষন্ডা হতাম যদি গায়ের জোরে, প্রশংসাতে আকাশ পাতাল যদি যেত ভরে - উঠে পড়ে গেলে যেতাম বাজে তর্ক ফেলে। করতে পারি সবি - যদি সহজ উপায় মেলে। সকলে। হাতের কাছে সুযোগ, তবু যদির আশায় বসে নিজের মাথা খাচ্ছ বাপু নিজের বুদ্ধি দোষে তৃতীয়। আমার নাম ’বটে’ আমি সদাই আছি চটে- কট্মটিয়ে তাকাই যখন, সবাই পালায় ছুটে। চশমা পরে বিচার ক’রে চিরে দেখাই চুল- উঠ্তে বস্তে কচ্ছে সবাই হাজার গন্ডা ভুল। আমার চোখে ধুলো দেবে সাধ্যি আছে কার? ধমক শুনে ভূতের বাবা হচ্ছে পগার পার। হাসছ? বটে ভাবছ বুঝি মস্ত তুমি লোক, একটি আমার ভেংচি খেলে উল্টে যাবে চোখ। সকলে। দিচ্ছ গালি, লোকের তাতে কিবা এল গেল? আকাশেতে থুতু ছুঁড়ে - নিজেই গায়েই ফেল। চতুর্থ। আমার নাম ’কিন্তু’ আমায় ’কিন্তু’ বলে ডাকে, সকল কাজে একটা কিছু গলদ লেগে থাকে। দমটা কাজে লাগি কিন্তু আটটা করি মাটি, ষোল আনা কথায় কিন্তু সিকি মাত্র খাঁটি। লম্ফ ঝম্ফবহুৎ কিন্তু কাজের নাইকো ছিরি- ফোস করে যাই তেড়ে - আবার ল্যাজ গুটিয়ে ফিরি। পাঁচটা জিনিস গড়তে গেলে দশটা ভেঙে চুর - বল্ দেখি ভাই কেমন আমি সাবাস বাহাদুর! সকলে। উচিত তোমায় বেধে রাখা নাকে দিয়ে দড়ি, বেগারখাটা পশুকাজের মূল্য কানাকড়ি। পঞ্চম। আমার নাম ’তবু’ তোমার কেউ কি আময়ি চেনো? দেখতে ছোট তবু আমার সাহস আছে জেনো। এতটুকু মানুষ তবু দ্বিধা নাইকো মনে, যে কাজেতেই লাগি আমি খাটি প্রাণপণে। এম্নি আমার জেদ, যখন অঙ্ক নিয়ে বসি, একুশ বারে না হয় যদি বাইশ বারে কষি। হাজার আসুক বাধা তবু উৎসাহ না কমে, হাজার লোকে চোখ রাঙালে তবু না যাই দ’মে। সকালে। নিস্কম্মারা গেল কোথা,পালাল কোন দেশে? কাজের মানুষ কারে বলে দেখুন এখন এসে। হেসে খেলে, শুয়ে বসে কত সময় যায়, সময়টা যে কাজে লাগায়,চালাক বলে তায়।
হিংসুটিদের গান
খাই খাই
খাই খাই
TODO আমরা ভালো লক্ষী সবাই, তোমরা ভারি বিশ্রী, তোমরা খাবে নিমের পাচন, আমরা খাব মিশ্রী। আমরা পাব খেলনা পুতুল ,আমরা পাব চম্চম্, তোমরা ত তা পাচ্ছ না কেউ, পেলে ও পাবে কম কম আমরা শোব খাট পালঙে মায়ের কাছে ঘেঁষ্টে, তোমরা শোবে অন্ধকারে একলা ভয়ে ভেস্তে। আমরা যাব জাম্তাড়াতে চড়ব কেমন ট্রেইনে, চেঁচাও যদি "সঙ্গে নে যাও" বল্ব "কলা এইনে"! আমরা ফিরি বুক ফুলিয়ে রঙিন্ জুতোয় মচ্মচ্, তোমরা হাঁদা নোংরা ছিছি হ্যাংলা নাকে ফচ্ফচ্। আমরা পরি রেশ্মি জরি, আমরা পরি গয়না, তোমরা সেসব পাও না ব’লে তাও তোমাদের সয় না। আমরা হব লাট মেজাজী, তোমরা হবে কিপ্টে, চাইবে যদি কিচ্ছু তখন ধরব গলা চিপ্টে।
সাধে কি বলে গাধা!
খাই খাই
খাই খাই
TODO বললে গাধা মনের দুঃখ অনেকখানি ভেবে- “বয়েস গেল খাটেতে খাটতে, বৃদ্ধ হলাম এবে, কেউ করে না তোয়াজ তবু, সংসারের কি রীতি! ইচ্ছে করে এক্ষুনি দিই কাজে কর্মে ইতি। কোথাকার ঐ নোংরা কুকুর ,আদর যে তার কত - যখন তখন ঘুমোচেছ সে লাটসাহেবের মত! ল্যাজ নেড়ে যেই, ঘেউ ঘেউ ঘেউ, লাফিয়ে দাঁড়ায় কোলে, মনিব আমার বোক্চন্দর্, আহ্লাদে যান গলে। আমিও যদি সেয়ানা হতুম, আরামে চোখ মুদে রোজ মনিবের মন ভোলাতুম আমি নেচে কুঁদে। ঠ্যাং নাচাতুম , ল্যাজ দোলাতুম, গান শোনাতুম সাধা - এ বুদ্ধিটা হয়নি আমার - সাধে কি বলে গাধা! বুদ্ধি এঁটে বসল গাধা আহ্লাদে ল্যাজ নেড়ে, নাচ্ল কত, গাইল কত, প্রাণের মায়া ছেড়ে। তারপরেতে শেষটা ক্রমে স্ফুতি এল প্রাণে চলল গাধা খোদ্ মনিবের ড্রয়িংরুমের পানে। মনিবসাহেব ঝিমুচ্ছিলেন চেয়ারখানি জুড়ে, গাধার গলার শব্দে হঠাৎ তন্দ্রা গেল উড়ে। চম্কে উঠে গাধার নাচন যেমনি দেখেন চেয়ে, হাসির চোটে সাহেব বুঝি মরেন বিষম খেয়ে। ভাব্লে গাধা - এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেষে। এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে চড়্ল সে তার হাটুর উপর দুই পা তুলে চেপে। সাহেব ডাকেন ’ত্রাহি ত্রাহি’ গাধাও ডাকে ’ঘ্যাঁকো’, অর্থাৎ কিনা কোলে চড়েছি, এখন আমায় দ্যাখো! ডাক শুনে সব দৌড়ে এল ব্যস্ত হয়ে ছুটে , দৌড়ে এল চাকর বাকর মিস্ত্রী মজুর মুটে, দৌড়ে এল পাড়ার লোকে ,দৌড়ে এল মালী - কারুর হাতে ডান্ডা লাঠি কারু বা হাত খালী। ব্যাপার দেখে অবাক সবাই ,চক্ষু ছানা বড়া - সাহেব বললে, “উচিত মতন শাসন টি চাই কড়া।” হাঁ হাঁ বলে ভীষন রকম উঠ্ল সবাই চটে। দে দমাদম্ মারের চোটে গাধার চমক্ ছোটে। ছুটল গাধা প্রাণের ভয়ে গানের তালিম ছেড়ে, ছুটল পিছে একশো লোকে হুড়মুড়িয়ে তেড়ে। তিন পা যেতে দশ ঘা পড়ে, রক্ত ওঠে মুখে - কষ্টে শেষে রক্ষা পেলে কাঁটার ঝোপে ঢুকে। কাঁটার ঘায়ে চামড়া গেল সার হল তার কাঁদা; ব্যাপার শুনে বললে সবাই, “সাধে কি বলে গাধা”।
নিঃস্বার্থ
খাই খাই
খাই খাই
TODO গোপালটা কি হিংসুটে মা! খাবার দিলেম ভাগ করে, বল্লে নাকো মুখেও কিছু, ফেল্লে ছুঁড়ে রাগ করে। জ্যেঠাইমা যে মেঠাই দিলেন, ‘দুই ভায়েতে খাও বলে’− দশটি ছিল, একটি তাহার চাখতে দিলেম ফাও বলে, আর যে নটি, ভাগ করে তায় তিনটে দিলেম গোপালকে− তবুও কেবল হ্যাংলা ছেলে আমার ভাগেই চোখ রাখে। বুঝিয়ে বলি, কাঁদিস কেন? তুই যে নেহাৎ কনিষ্ঠ, বয়স বুঝে, সামলে খাবি, তা নইলে হয় অনিষ্ট। তিনটি বছর তফাৎ মোদের, জ্যায়দা হিসাব গুণতি তাই, মোদ্দা আমার ছয়খানি হয়, তিন বছরে তিনটি পাই, তাও মানে না কেবল কাঁদে, স্বার্থপরের শয়তানি, শেষটা আমার মেঠাইগুলো খেতেই হলো সবখানি।
জালা-কুঁজো সংবাদ
খাই খাই
খাই খাই
TODO পেটমোটা জালা কয়, "হেসে আমি মরিরে কুঁজো তোর হেন গলা এতটুকু শরীরে!" কুঁজো কয়, "কথা কস্ আপনাকে না চিনে, ভুঁড়িখানা দেখে তোর কেঁদে আর বাঁচিনে।" জালা কয়, "সাগরের মাপে গড়া বপুখান, ডুবুরিরা কত তোলে তবু জল অফুরান।" কুঁজো কয়, "ভালো কথা ! তবে যদি দৈবে, ভুঁড়ি যায় ভেস্তিয়ে জল কোথা রইবে?" "নিজ কথা ভুলে যাস?" জালা কয় গর্জে, "ঘাড়ে ধরে হেঁট ক’রে জল নেয় তোর যে।" কুঁজো কয়, "নিজ পায়ে তবু খাড়া রই তো- বিঁড়ে বিনা কুপোকাৎ, তেজ তোর ঐতো।"
তেজিয়ান্
খাই খাই
খাই খাই
TODO চলে খচ্খচ্ রাগে গজ্গজ্ জুতো মচ্মচ্ তানে, ভুরু কট্মট্ ছড়ি ফট্ফট্ লাথি চট্পট্ হানে। দেখে বাঘ-রাগ লোকে ’ভাগ ভাগ’ করে আগভাগ থেকে, বয়ে লাফ ঝাঁপ বলে ’বাপ্ বাপ্’ সবে হাবভাব দেখে। লাথি চার চার খেয়ে মার্জার ছোটে যার যার ঘরে, মহা উৎপাত ক’রে হুটপাট্ চলে ফুটপাথ্ পরে। ঝাড়ু–বর্দার হারুসর্দার ফেরে ঘরদ্বার ঝেড়ে, তারি বালতিএ- দেখে ফাল্ দিয়ে আসে পালটিয়ে তেড়ে। রেগে লালমুখে হেঁকে গাল রুখে মারে তাল ঠুকে দাপে, মারে ঠন্ঠন্ হাড়ে টন্টন্ মাথা ঝন ঝন কাঁপে! পায়ে কলসিটে! কেন বাল্তিতে মেরে চাল দিতে গেলে? বুঝি ঠ্যাং যায় খোঁড়া ল্যাংচায় দেখে ভ্যাংচায় ছেলে।
হরিষে বিষাদ
খাই খাই
খাই খাই
দেখছে খোকা পঞ্জিকাতে এই বছরে কখন কবে ছুটির কত খবর লেখে, কিসের ছুটি কদিন হবে। ঈদ, মহরম, দোল, দেওয়ালি, বড়দিন আর বর্ষশেষে— ভাবছে যত ফুল্লমুখে, ফুর্তিভরে ফেলছে হেসে। এমন কালে নীল আকাশে হঠাৎ খ্যাপা মেঘের মতো, উথলে ছোটে কান্নাধারা ডুবিয়ে তাহার হর্ষ যত। “কি হল তোর?” সবাই বলে, “কলমটা কি বিঁধল হাতে?” “জিবে কি তোর দাঁত বসালি? কামড়াল কি ছারপোকাতে?” প্রশ্ন শুনে কান্না চড়ে, অশ্রু ঝরে দ্বিগুণ বেগে, পঞ্জিকাটি আছড়ে ফেলে বল্লে কেঁদে আগুন রেগে— “ঈদ পড়েছে জষ্ঠিমাসে গ্রীষ্মে যখন থাকেই ছুটি, বর্ষশেষ আর দোল তো দেখি রোববারেতেই পড়লো দুটি। দিনগুলোকে করলে মাটি মিথ্যে পাজি পঞ্জিকাতে— মুখ ধোব না, ভাত খাব না, ঘুম যাব না আজকে রাতে।”
হিতে বিপরীত
খাই খাই
খাই খাই
TODO ওরে ছাগল, বল্ত আগে সুড় সুড়িটা কেমন লাগে? কই গেল তোর জারিজুরি লম্ফঝম্ফ বাহাদুরি। নিত্যি যে তুই আসতি তেড়ে শিং নেড়ে আর দাড়ি নেড়ে, ওরে ছাগল করবি রে কি? গুঁতোবি তো আয়না দেখি। হাঁ হাঁ হাঁ, এ কেমন কথা ? এমন ধারা অভদ্রতা! শান্ত যারা ইতরপ্রাণী, তাদের পরে চোখরাঙানি! ঠান্ডা মেজাজ কয় না কিছু, লাগতে গেছে তারই পিছু? শিক্ষার তোদের এম্নিতর ছি-ছি-ছি! লজ্জা বড়। ছাগল ভাবে সামনে একি! একটুখানি গুতিয়ে দেখি। গুতোর চোটে ধড়াধ্বড় হুড়মুড়িয়ে ধুলোয় পড়। তবে রে পাজি লক্ষ্মীছাড়া, আমার পরেই বিদ্যেঝড়া, পাত্রাপাত্র নাই কিরে হুঁশ্ দে দমাদম্ ধুপুস্ ধাপুস্।
সঙ্গীহারা
খাই খাই
খাই খাই
TODO... সবাই নাচে ফূর্তি করে সবাই করে গান, একলা বসে হাঁড়িচাঁচার মুখটি কেন ম্লান ? দেখ্ছ নাকি আমার সাথে সবাই করে আড়ি- তাইত আমার মেজাজ খ্যাপা মুখটি এমন হাঁড়ি । তাও কি হয় ! ঐ যে মাঠে শালিখ পাখি ডাকে তার কাছে কৈ যাওনিকো ভাই শুধাওনিতো তাকে ! শালিখ পাখি বেজায় ঠ্যাঁটা চেঁচায় মিছিমিছি, হল্লা শুনে হাড় জ্বলে যায় কেবল কিচিমিচি । মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখি জুড়িয়ে দিল প্রাণ তার কাছে কৈ বস্লে নাতো শুনলে না তার গান । দোয়েল পাখির ঘ্যান্ঘ্যানানি আর কি লাগে ভালো ? যেমন রূপে তেমন গুণে তেমনি আবার কালো । রূপ যদি চাও যাও না কেন মাছরাঙার কাছে, অমন খাসা রঙের বাহার আর কি কারো আছে ? মাছরাঙা ? তারেও কি আর পাখির মধ্যে ধরি রকম সকম সঙের মতন, দেমাক দেখে মরি । পায়রা ঘুঘু কোকিল চড়াই চন্দনা টুনটুনি কারে তোমার পছন্দ হয়, সেই কথাটি শুনি ! এই গুলো সব ছ্যাবলা পাখি নেহাৎ ছোট জাত- দেখলে আমি তফাৎ হাটি অমনি পঁচিশ হাত । এতক্ষণে বুঝতে পারি ব্যাপারখানা কি যে— সবার তুমি খুঁৎ পেয়েছ নিখুঁৎ কেবল নিজে! মনের মত সঙ্গী তোমার কপালে নাই লেখা তাইতে তোমায় কেউ পোঁছে না তাইতে থাক একা।
মূর্খ-মাছি
খাই খাই
খাই খাই
TODO বিখ্যাত ইংরেজি কবিতার অনুসরণে মাকড়সা সান্-বাঁধা মোর আঙিনাতে জাল বুনেছি কালকে রাতে, ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা । আয় না মাছি আমার ঘরে, আরাম পাবি বসলে পরে, ফরাশ পাতা দেখবি কেমন খাসা ! মাছি থাক্ থাক্ থাক্ আর বলে না, আন্কথাতে মন গলে না- ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা । ঢুক্লে তোমার জালের ঘেরে কেউ কোনদিন আর কি ফেরে ? বাপ্রে ! সেথায় ঢুক্তে মোদের মানা । মাকড়সা হাওয়ায় দোলে জালের দোলা চারদিকে তার জান্লা খোলা আপ্নি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে ! আয় না হেথা হাত পা ধুয়ে পাখ্না মুড়ে থাক্ না শুয়ে- ভন্ ভন্ ভন্ মরবি কেন উড়ে ? মাছি কাজ নেই মোর দোলায় দুলে, কোথায় তোমার কথায় ভুলে প্রাণটা নিয়ে টান্ পড়ে ভাই শেষে । তোমার ঘরে ঘুম যদি পায় সে ঘুম কভু ভাঙবে না হায়- সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে ! মাকড়সা মিথ্যে কেন ভাবিস্ মনে ? দেখ্না এসে ঘরের কোণে ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত ! দে-টাপাটপ ফেলবি মুখে নাচ্বি গাবি থাক্বি সুখে ভাবনা ভুলে বাদ্শা-রাজার মতো । মাছি লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি, ভাবছ আমায় তেমনি লোভী ! মিথ্যে দাদা ভোলাও কেন খালি, করব কি ছাই ভাড়ার দেখে ? প্রণাম করি আড়াল থেকে- আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি । মাকড়সা নধর কালো বদন ভরে রূপ যে কত উপচে পড়ে ! অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে ! হাজার চোখে মানিক জ্বলে ! ইন্দ্রধনু পাখার তলে ! ছয় পা ফেলে আয় না দেখি ধীরে । মাছি মন ফুর্ফুর্ ফুর্তি নাচে- একটুখানি যাই না কাছে ! যাই যাই যাই- বাপ্রে একি বাঁধা । ও দাদা ভাই রক্ষে কর ! ফাঁদ পাতা এ কেমন তরো । পড়ে হাত পা হল বাঁধা । দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায় দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায় নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায় ? এমনি দশাই তার কপালে লেখা । কথার পাকে মানুষ মেরে মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে, গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে ।
জীবনের হিসাব
খাই খাই
খাই খাই
TODO বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে মাঝিরে কন , "বলতে পারিস্ সূর্যি কেন ওঠে? চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?" বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফেলিয়ে হাসে। বাবু বলেন, "সারা জনম মরলিরে তুই খাটি, জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!" খানিক বাদে কহেন বাবু,"বলত দেখি ভেবে নদীর ধারা কেম্নে আসে পাহাড় হতে নেবে? বলত কেন লবণপোরা সাগরভরা পানি?" মাঝি সে কয়, "আরে মশাই , অত কি আর জানি?" বাবু বলেন, "এই বয়সে জানিসনেও তাকি? জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাকি।" আবার ভেবে কহেন বাবু, "বলতো ওরে বুড়ো, কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো? বল্ত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?" বৃদ্ধ বলে, "আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?" বাবু বলেন, "বলব কি আর, বলব তোরে কি তা,- দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।" খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে, বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুব্ল বুঝি দুলে। মাঝিরে কন, "একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি, ডুবল নাকি নৌকো এবার ? মরব নাকি আজি?" মাঝি শুধায়, "সাঁতার জানো? মাথা নাড়েন বাবু" মুর্খ মাঝি বলে, "মশাই , এখন কেন কাবু? বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব কারো পিছে, তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে!"
আশ্চর্য
খাই খাই
খাই খাই
নিরীহ কলম, নিরীহ কালি, নিরীহ কাগজে লিখিল গালি— ‘বাঁদর, বেকুব, আজব হাঁদা, বকাট ফাজিল, অকাট গাধা!’ আবার লিখিল কলম ধরি বচন মিষ্টি, যতন করি— ‘শান্ত, মানিক, শিষ্ট, সাধু, বাছা রে, ধন রে, লক্ষ্মী, যাদু।’ মনের কথাটি ছিল যে মনে, রটিয়া উঠিল খাতার কোণে, আঁচড়ে আঁকিতে আখর ক’টি, কেহ খুশি, কেহ উঠিল চটি! রকম-রকম কালির টানে কারো হাসি কারো অশ্রু আনে, মারে না, ধরে না, হাঁকে না বুলি, লোকে হাসে কাঁদে কি দেখি ভুলি? সাদায় কালোয় কি খেলা জানে? ভাবিয়া ভাবিয়া না পাই মানে॥
নিরুপায়
খাই খাই
খাই খাই
বসি বছরের পয়লা তারিখে মনের খাতায় রাখিলাম লিখে— ‘সহজে উদরে ঢুকিবে যেটুক, সেইটুকু খাব, হব না পেটুক।’ মাস দুই যেতে খাতা খুলে দেখি, এরি মাঝে মন লিখিয়াছে এ কি! লিখিয়াছে, ‘যদি নেমন্তন্নে কেঁদে ওঠে প্রাণ লুচির জন্যে, উচিত কি হবে কাঁদানো তাহারে? কিংবা যখন বিপুল আহারে, তেড়ে দেয় পাতে পোলাও কালিয়া পায়েস অথবা রাবড়ি ঢালিয়া— তখন কি করি, আমি নিরুপায়! তাড়াতে না পারি, বলি আয়, আয়, ঢুকে আয় মুখে দুয়ার ঠেলিয়া উদার রয়েছি উদর মেলিয়া!’
হারিয়ে পাওয়া
খাই খাই
খাই খাই
TODO ঠাকুরদাদার চশমা কোথা ? ওরে গণ্শা, হাবুল, ভোঁতা, দেখ্না হেথা, দেখ্না হোথা- খোঁজ না নিচে গিয়ে । কই কই কই? কোথায় গেল ? টেবিল টানো, ডেস্কো ঠেল, ঘরদোর সব উলটে ফেল- খোঁচাও লাঠি দিয়ে । খুঁজছে মিছে কুঁজোর পিছে, জুতোর ফাঁকে, খাটের নিচে, কেউ বা জোরে পর্দা খিঁচে- বিছনা দেখে ঝেড়ে- লাফিয়ে ঘুরে হাঁফিয়ে ঘেমে ক্লান্ত সবে পড়্ল থেমে, ঠাকুরদাদা আপনি নেমে আসেন তেড়েমেড়ে । বলেন রেগে, "চশমাটা কি ঠাং গজিয়ে ভাগ্ল নাকি ? খোঁজার নামে কেবল ফাঁকি- দেখছি আমি এসে !" যেমন বলা দারূণ রোষে, কপাল থেকে অম্নি খ’সে চশমা পড়ে তক্তপোশে- সবাই ওঠে হেসে !
নন্দগুপি
খাই খাই
খাই খাই
TODO হঠাৎ কেন দুপুর রোদে চাদর দিয়ে মুড়ি, চোরের মত নন্দগোপাল চল্ছে গুড়ি গুড়ি? লুকিয়ে বুঝি মুখোশখানা রাখছে চুপি চুপি? আজকে রাতে অন্ধকারে টেরটা পাবেন গুপি! আয়না হাতে দাঁড়িয়ে গুপি হাসছে কেন খালি? বিকট রকম পোশাক করে মাখ্ছে মুখে কালি! এম্মি করে লম্ফ দিয়ে ভেংচি যখন দেবে নন্দ কেমন আঁৎকে যাবে -হাস্ছে সে তাই ভেবে। আঁধার রাতে পাতার ফাঁকে ভূতের মতন কেরে? ফন্দি এঁটে নন্দগোপাল মুখোশ মুখে ফেরে! কোথায় গুপি, আসুক না সে ইদিক্ পানে ঘুরে- নন্দদাদার হুঙ্কারে তার প্রাণটি যাবে উড়ে। হেথায় কেরে মূর্তি ভীষণ মুখটি ভরা গোঁফে? চিমটে হাতে জংলা গুপি বেড়ায় ঝাড়ে ঝোপে! নন্দ যখন বাড়ির পথে আসবে গাছের আড়ে, "মার্ মার্ মার কাট্রে"লে পড়বে তাহার ঘাড়ে নন্দ চলেন এক পা দু পা আস্তে ধীরে গতি, টিপ্টিপিয়ে চলেন গুপি সাবধানেতে অতি- মোড়ের মুখে ঝোপের কাছে মার্তে গিয়ে উকি দুই সোয়ান এক্কেবারে হঠাৎ মুখোমুখি! নন্দ তখন ফন্দি ফাঁদন কোথায় গেলে ভুলি কোথায় গেল গুপির মুখে মার্ মার্ মার্ বুলি। নন্দ পড়েন দাঁতকপাটি মুখোশ টুখোশ ছেড়ে গুপির গায়ে জ্বরটি এল কম্প দিয়ে তেড়ে গ্রামের লোকে দৌড়ে তখন বদ্যি আনে ডেকে, কেউ বা নাচে কেউ বা কাঁদে রকম সকম দেখে। নন্দগুপির মন্দ কপাল এম্নি হল শেষে, দেখ্লে তাদের লুটোপুটি সবাই মেরে হেসে।
Untitled
খাই খাই
খাই খাই
কেন সব কুকুরগুলো খামখা চ্যাঁচায় রাতে? কেন বল্ দাঁতের পোকা থাকে না ফোক্লা দাঁতে? পৃথিবীর চ্যাপ্টা মাথা, কেন সে কাদের দোষে?— এস ভাই চিন্তা করি দুজনে ছায়ায় বসে।
Untitled
খাই খাই
খাই খাই
দাদা গো দাদা, সত্যি তোমার সুরগুলো খুব খেলে! এম্নি মিঠে—ঠিক যেন কেউ গুড় দিয়েছে ঢেলে! দাদা গো দাদা, এমন খাসা কণ্ঠ কোথায় পেলে?— এই খেলে যা! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে? দাদা গো দাদা, পায় পড়ি তোর, ভয় পেয়ে যায় ছেলে— গাইবে যদি ঐখেনে গাও, ঐ দিকে মুখ মেলে।
বর্ষ গেল, বর্ষ এল
খাই খাই
খাই খাই
TODO বর্ষ গেল বর্ষ এল গ্রীষ্ম এলেন বাড়ি- পৃথ্বী এলেন চক্র দিয়ে এক বছরের পাড়ি । সত্যিকারের এই পৃথিবীর বয়স কেবা জানে, লক্ষ হাজার বছর ধরে চল্ছে একই টানে । আপন তালে আকাশ পথে আপনি চলে বেগে, গ্রীষ্মকালের তপ্তরোদে বর্ষাকালের মেঘে, শরৎকালের কান্নাহাসি হাল্কা বাদল হাওয়া, কুয়াশা-ঘেরা পর্দা ফেলে হিমের আসা যাওয়া- শীতের শেষে রিক্ত বেশে শূন্য করে ঝুলি, তার প্রতিশোধ ফুলে ফলে বসন্তে লয় তুলি । না জানি কোন নেশার ঝোঁকে যুগযুগান্ত ধরে, ছয়টি ঋতু দ্বারে দ্বারে পাগল হয়ে ঘোরে ! না জানি কোন ঘূর্ণীপাকে দিনের পর দিন, এমন ক’রে ঘোরায় তারে নিদ্রাবিরামহীন ! কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম রাখে লক্ষযুগের প্রথা, না জানি তার চাল চলনের হিসাব রাখে কোথা !
গ্রীষ্ম
খাই খাই
খাই খাই
TODO সর্বনেশে গ্রীষ্ম এসে বর্ষশেষে রুদ্রবেশে আপন ঝোঁকে বিষম রোখে আগুন ফোকে ধরার চোখে। তাপিয়ে গগন কাঁপিয়ে ভুবন মাৎল তপন নাচল পবন। রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলে স্থলে। ফেল্ছে আকাশ তপ্ত নিশাস ছুটছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস, ফুলের বিতান শুকনো শ্মশান যায় বুঝি প্রান হায় ভগবান। দারুণ তৃষায় ফিরছে সবায় জল নাহি পায় হায় কি উপায়, তাপের চোটে কথা না ফোটে হাপিয়ে ওঠে ঘর্ম ছোটে। বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড় করে ধড়্ফড়্ ধরার পাঁজর, দশ দিক হয় ঘোর ধুলিময় জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়। করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বারবার ঘন হুন্কার, শুনি নিয়তই থাকি থাকি ওই হাঁকে হৈ হৈ মাভৈ মাভৈঃ।
বর্ষার কবিতা
খাই খাই
খাই খাই
কাগজ কলম লয়ে বসিয়াছি সদ্য, আষাঢ়ে লিখিতে হবে বরষার পদ্য। কি যে লিখি কি যে লিখি ভাবিয়া না পাই রে, হতাশে বসিয়া তাই চেয়ে থাকি বাইরে। সারাদিন ঘনঘটা কালো মেঘ আকাশে, ভিজে ভিজে পৃথিবীর মুখখানা ফ্যাকাশে। বিনা কাজে ঘরে বাঁধা কেটে যায় বেলাটা, মাটি হল ছেলেদের ফুটবল খেলাটা। আপিসের বাবুদের মুখে নাই ফুর্তি, ছাতা কাঁধে জুতা হাতে ভ্যাবাচ্যাকা মূর্তি। কোনখানে হাঁটুজল, কোথা ঘন কর্দম— চলিতে পিছল পথে পড়ে লোক হর্দম। ব্যাঙেদের মহাসভা আহ্লাদে গদ্গদ্, গান করে সারারাত অতিশয় বদ্খদ।
বর্ষ শেষ
খাই খাই
খাই খাই
TODO শুন রে আজব কথা, শুন বলি ভাইরে- বছরের আয়ু দেখ বেশিদিন নাই রে । ফেলে দিয়ে পুরাতন জীর্ণ এ খোলসে নূতন বরষ আসে, কোথা হতে বল সে ! কবে যে দিয়েছে চাবি জগতের যন্ত্রে, সেই দমে আজও চলে না জানি কি মন্ত্রে ! পাকে পাকে দিনরাত ফিরে আসে বার বার, ফিরে আসে মাস ঋতু- এ কেমন কারবার । কোথা আসে কোথা যায় নাহি কোন উদ্দেশ, হেসে খেলে ভেসে যায় কত দূর দূর দেশ । রবি যায় শশী যায় গ্রহ তারা সব যায়, বিনা কাঁটা কম্পাসে বিনা কল কব্জায় । ঘুরপাকে ঘুরে চলে, চলে কত ছন্দে, তালে তালে হেলে দুলে চলে রে আনন্দে ।
শ্রাবণে
খাই খাই
খাই খাই
TODO জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত- অফুরান্ নামতায় বাদলের ধারাপাত । আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার, পৃথিবীর ছাত পিটে ঝামাঝম্ বারিধার । স্নান করে গাছপালা প্রাণখোলা বরষায়, নদীনালা ঘোলাজল ভরে ওঠে ভরসায় । উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণের শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের । জলেজলে জলময় দশদিক্ টলমল্, অবিরাম একই গান, ঢালো জল ঢালো জল । ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের, ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের । শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্ধুক্, ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ ।
(Untitled)
খাই খাই
খাই খাই
চলে হন্ হন্ ছোটে পন্ পন্ ঘোরে বন্ বন্ বাজে ঠন্ ঠন্ বায়ু শন্ শন্ শীতে কন্ কন্ কাশি খন্ খন্ ফোড়া টন্ টন্ মাছি ভন্ ভন্ থালা ঝন্ ঝন্