২৫৯
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৫৯
বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে।
পথ জুড়ে কি করবি বড়াই, সরতে হবে॥
লুঠ-করা ধন ক’রে জড়ো কে হতে চাস সবার বড়ো—
এক নিমেষে পথের ধুলায় পড়তে হবে।
নাড়া দিতে গিয়ে তোমায় নড়তে হবে॥
নিচে বসে আছিস কে রে, কাঁদিস কেন?
লজ্জাডোরে আপনাকে রে বাঁধিস কেন?
ধনী যে তুই দুঃখধনে সেই কথাটি রাখিস মনে—
ধুলার ’পরে স্বর্গ তোমায় গড়তে হবে—
বিনা অস্ত্র, বিনা সহায়, লড়তে হবে॥
২৬০
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৬০
তুই কেবল থাকিস সরে সরে,
তাই পাস নে কিছুই হৃদয় ভরে॥
আনন্দভাণ্ডারের থেকে দূত যে তোরে গেল ডেকে—
কোণে বসে দিস নে সাড়া, সব খোওয়ালি এমনি করে॥
জীবনটাকে তোল্ জাগিয়ে,
মাঝে সবার আয় আগিয়ে।
চলিস নে পথ মেপে মেপে, আপনাকে দে নিখিল ব্যেপে—
যে ক’টা দিন বাকি আছে কাটাস নে আর ঘুমের ঘোরে॥
২৬১
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৬১
দাঁড়াও, মন, অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড-মাঝে আনন্দসভাভবনে আজ॥
বিপুলমহিমাময়, গগনে মহাসনে বিরাজ কর বিশ্বরাজ॥
সিন্ধু শৈল তটিনী মহারণ্য জলধরমালা
তপন চন্দ্র তারা গভীর মন্দে্র গাহিছে শুন গান।
এই বিশ্বমহোৎসব দেখি মগন হল সুখে কবিচিত্ত,
ভুলি গেল সব কাজ॥
২৬২
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৬২
নদীপারের এই আষাঢ়ের প্রভাতখানি
নে রে ও মন, নে রে আপন প্রাণে টানি॥
সবুজ-নীলে সোনায় মিলে যে সুধা এই ছড়িয়ে দিলে,
জাগিয়ে দিলে আকাশতলে গভীর বাণী,
নে রে ও মন, নে রে আপন প্রাণে টানি॥
এমনি করে চলতে পথে ভবের কূলে
দুই ধারে যা ফুল ফুটে সব নিস রে তুলে।
সে ফুলগুলি চেতনাতে গেঁথে তুলিস দিবস-রাতে,
দিনে দিনে আলোর মালা ভাগ্য মানি—
নে রে ও মন, নে রে আপন প্রাণে টানি॥
২৬৩
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৬৩
শান্ত হ রে মম চিত্ত নিরাকুল, শান্ত হ রে ওরে দীন!
হেরো চিদম্বরে মঙ্গলে সুন্দরে সর্বচরাচর লীন॥
শুন রে নিখিলহৃদয়নিস্যন্দিত শূন্যতলে উথলে জয়সঙ্গীত,
হেরো বিশ্ব চিরপ্রাণতরঙ্গিত নন্দিত নিত্যনবীন॥
নাহি বিনাশ বিকার বিশোচন, নাহি দুঃখ সুখ তাপ—
নির্মল নিষ্কল নির্ভয় অক্ষয়, নাহি জরা জ্বর পাপ।
চির আনন্দ, বিরাম চিরন্তন, প্রেম নিরন্তর, জ্যোতি নিরঞ্জন—
শান্তি নিরাময়, কান্তি সুনন্দন,
সান্ত্বন অন্তবিহীন॥
২৮১
পূজা - আত্মবোধন
পূজা - আত্মবোধন
২৮১
ডাকো মোরে আজি এ নিশীথে
নিদ্রামগন যবে বিশ্বজগত,
হৃদয়ে আসিয়ে নীরবে ডাকো হে
তোমারি অমৃতে॥
জ্বালো তব দীপ এ অন্তরতিমিরে,
বার বার ডাকো মম অচেত চিতে॥