১
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১
আজি কাঁদে কারা ওই শুনা যায়, অনাথেরা কোথা করে হায়- হায়,
দিন মাস যায়, বরষ ফুরায়— ফুরাবে না হাহাকার ?।
ওই কারা চেয়ে শূন্য নয়ানে সুখ-আশা-হীন নববর্ষ-পানে,
কারা শুয়ে শুষ্ক ভূমিশয়ানে— মরুময় চারিধার॥
আশ্বাসবচন সকলেরে ক’য়ে এসেছিল বর্ষ কত আশা লয়ে,
কত আশা দ’লে আজ যায় চ’লে— শূন্য কত পরিবার।
কত অভাগার জীবনসম্বল মুছে লয়ে গেল, রেখে অশ্রুজল—
নব বরষের উদয়ের পথে রেখে গেল অন্ধকার॥
হায়, গৃহে যার নাই অন্নকণা মানুষের প্রেম তাও কি পাবে না—
আজি নাই কি রে কাতরের তরে করুণার অশ্রুধার।
কেঁদে বলো, ‘নাথ, দুঃখ দূরে যাক, তাপিত ধরার হৃদয় জুড়াক—
বর্ষ যদি যায় সাথে লয়ে যাক বরষের শোকভার।’
২
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
২
জয় তব হোক জয়।
স্বদেশের গলে দাও তুমি তুলে যশোমালা অক্ষয়।
বহুদিন হতে ভারতের বাণী আছিল নীরবে অপমান মানি,
তুমি তারে আজ জাগায়ে তুলিয়া রটালে বিশ্বময়।
জ্ঞানমন্দিরে জ্বালায়েছ তুমি যে নব আলোকশিখা
তোমার সকল ভ্রাতার ললাটে দিল উজ্জ্বল টিকা।
অবারিতগতি তব জয়রথ ফিরে যেন আজি সকল জগৎ,
দুঃখ দীনতা যা আছে মোদের তোমারে বাঁধি না রয়॥
৩
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৩
বিশ্ববিদ্যাতীর্থপ্রাঙ্গন কর’ মহোজ্জ্বল আজ হে।
বরপুত্রসংঘ বিরাজ’ হে।
ঘন তিমিররাত্রির চিরপ্রতীক্ষা পূর্ণ কর’, লহ’ জ্যোতিদীক্ষা।
যাত্রিদল সব সাজ’ হে। দিব্যবীণা বাজ’ হে।
এস’ কর্মী, এস’ জ্ঞানী, এস’ জনকল্যাণধ্যানী,
এস’ তাপসরাজ হে!
এস’ হে ধীশক্তিসম্পদ মুক্তবন্ধ সমাজ হে॥
৪
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৪
জগতের পুরোহিত তুমি— তোমার এ জগৎ-মাঝারে
এক চায় একেরে পাইতে, দুই চায় এক হইবারে।
ফুলে ফুলে করে কোলাকুলি, গলাগলি অরুণে উষায়।
মেঘ দেখে মেঘ ছুটে আসে, তারাটি তারার পানে চায়।
পূর্ণ হল তোমার নিয়ম, প্রভু হে, তোমারি হল জয়—
তোমার কৃপায় এক হল আজি এই যুগলহৃদয়।
যে হাতে দিয়েছ তুমি বেঁধে শশধরে ধরার প্রণয়ে
সেই হাতে বাঁধিয়াছ তুমি এই দুটি হৃদয়ে হৃদয়ে।
জগত গাহিছে জয়-জয়, উঠেছে হরষকোলাহল,
প্রেমের বাতাস বহিতেছে— ছুটিতেছে প্রেমপরিমল।
পাখিরা গাও গো গান, কহো বায়ু চরাচরময়—
মহেশের প্রেমের জগতে প্রেমের হইল আজি জয়॥
৫
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৫
তুমি হে প্রেমের রবি আলো করি চরাচর
যত করো বিতরণ অক্ষয় তোমার কর।
দুজনের আঁখি-’পরে তুমি থাকো আলো ক’রে—
তা হলে আঁধারে আর বলো হে কিসের ডর।
তোমারে হারায় যদি দুজনে হারাবে দোঁহে—
দুজনে কাঁদিবে বসি অন্ধ হয়ে ঘন মোহে,
এমনি আঁধার হবে পাশাপাশি বসে রবে
তবুও দোঁহার মুখ চিনিবে না পরস্পর।
দেখো, প্রভু, চিরদিন আঁখি-’পরে থেকো জেগে—
তোমারে ঢাকে না যেন সংসারের ঘন মেঘে।
তোমারি আলোকে বসি উজল-আনন-শশী
উভয়ে উভয়ে হেরে পুলকিতকলেবর॥
৬
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৬
শুভদিনে শুভক্ষণে পৃথিবী আনন্দমনে
দুটি হৃদয়ের ফুল উপহার দিল আজ—
ওই চরণের কাছে দেখো গো পড়িয়া আছে,
তোমার দক্ষিণহস্তে তুলে লও রাজরাজ।
এক সূত্র দিয়ে, দেব, গেঁথে রাখো এক সাথে—
টুটে না ছিঁড়ে না যেন, থাকে যেন ওই হাতে।
তোমার শিশির দিয়ে রাখো তারে বাঁচাইয়ে—
কী জানি শুকায় পাছে সংসাররৌদ্রের মাঝ॥
৭
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৭
দুজনে এক হয়ে যাও, মাথা রাখো একের পায়ে—
দুজনের হৃদয় আজি মিলুক তাঁরি মিলন-ছায়ে।
তাঁহারি প্রেমের বেগে দুটি প্রাণ উঠুক জেগে—
যা-কিছু শীর্ণ মলিন টুটুক তাঁরি চরণ-ঘায়ে।
সমুখে সংসারপথ, বিঘ্নবাধা কোরো না ভয়—
দুজনে যাও চলে যাও— গান করে যাও তাঁহারি জয়।
ভকতি লও পাথেয়, শকতি হোক অজেয়—
অভয়ের আশিসবাণী আসুক তাঁরি প্রসাদ-বায়ে॥
৮
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৮
তাঁহার অসীম মঙ্গললোক হতে
তোমাদের এই হৃদয়বনচ্ছায়ে
অনন্তেরই পরশরসের স্রোতে
দিয়েছে আজ বসন্ত জাগায়ে।
তাই সুধাময় মিলনকুসুমখানি
উঠল ফুটে কখন নাহি জানি—
এই কুসুমের পূজার অর্ঘ্যখানি
প্রণাম করো দুইজনে তাঁর পায়ে।
সকল বাধা যাক তোমাদের ঘুচে,
নামুক তাঁহার আশীর্বাদের ধারা।
মলিন ধুলার চিহ্ন সে দিক মুছে,
শান্তিপবন বহুক বন্ধহারা।
নিত্যনবীন প্রেমের মাধুরীতে
কল্যাণফল ফলুক দোঁহার চিতে,
সুখ তোমাদের নিত্য রহুক দিতে
নিখিলজনের আনন্দ বাড়ায়ে॥
৯
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
৯
নবজীবনের যাত্রাপথে দাও দাও এই বর
হে হৃদয়েশ্বর—
প্রেমের বিত্ত পূর্ণ করিয়া দিক চিত্ত;
যেন এ সংসারমাঝে তব দক্ষিণমুখ রাজে;
সুখরূপে পাই তব ভিক্ষা, দুখরূপে পাই তব দীক্ষা;
মন হোক ক্ষুদ্রতামুক্ত, নিখিলের সাথে হোক যুক্ত,
শুভকর্মে যেন নাহি মানে ক্লান্তি
শান্তি শান্তি শান্তি॥
১০
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১০
প্রেমের মিলনদিনে সত্য সাক্ষী যিনি অন্তর্যামী
নমি তাঁরে আমি— নমি নমি।
বিপদে সম্পদে সুখে দুখে সাথি যিনি দিনরাতি অন্তর্যামী
নমি তাঁরে আমি— নমি নমি।
তিমিররাত্রে যাঁর দৃষ্টি তারায় তারায়,
যাঁর দৃষ্টি জীবনের মরণের সীমা পারায়,
যাঁর দৃষ্টি দীপ্ত সূর্য-আলোকে অগ্নিশিখায়, জীব-আত্মায় অন্তর্যামী
নমি তাঁরে আমি— নমি নমি।
জীবনের সব কর্ম সংসারধর্ম করো নিবেদন তাঁর চরণে।
যিনি নিখিলের সাক্ষী, অন্তর্যামী
নমি তাঁরে আমি— নমি নমি॥
১১
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১১
সুমঙ্গলী বধূ, সঞ্চিত রেখো প্রাণে স্নেহমধু। আহা।
সত্য রহো তুমি প্রেমে, ধ্রুব রহো ক্ষেমে—
দুঃখে সুখে শান্ত রহো হাস্যমুখে।
আঘাতে হও জয়ী অবিচল ধৈর্যে কল্যাণময়ী। আহা॥
চলো শুভবুদ্ধির বাণী শুনে,
সকরুণ নম্রতাগুণে চারি দিকে শান্তি হোক বিস্তার—
ক্ষমাস্নিগ্ধ করো তব সংসার।
যেন উপকরণের গর্ব আত্মারে না করে খর্ব।
মন যেন জানে, উপহাস করে কাল ধনমানে—
তব চক্ষে যেন ধূলির সে ফাঁকি নিত্যেরে না দেয় ঢাকি। আহা॥
১২
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১২
ইহাদের করো আশীর্বাদ।
ধরায় উঠিছে ফুটি ক্ষুদ্র প্রাণগুলি, নন্দনের এনেছে সংবাদ।
এই হাসিমুখগুলি হাসি পাছে যায় ভুলি,
পাছে ঘেরে আঁধার প্রমাদ,
ইহাদের কাছে ডেকে বুকে রেখে, কোলে রেখে,
তোমরা করো গো আশীর্বাদ।
বলো, ‘সুখে যাও চলে ভবের তরঙ্গ দ’লে
স্বর্গ হতে আসুক বাতাস—
সুখ দুঃখ কোরো হেলা, সে কেবল ঢেউখেলা
নাচিবে তোদের চারিপাশ।’
১৩
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১৩
সমুখে শান্তিপারাবার—
ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।
তুমি হবে চিরসাথি, লও লও হে ক্রোড় পাতি—
অসীমের পথে জ্বলিবে জ্যোতি ধ্রুবতারকার॥
মুক্তিদাতা, তোমার ক্ষমা তোমার দয়া
হবে চিরপাথেয় চিরযাত্রার।
হয় যেন মর্তের বন্ধনক্ষয়, বিরাট বিশ্ব বাহু মেলি লয়—
পায় অন্তরে নির্ভয় পরিচয় মহা-অজানার॥
১৪
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১৪
একদিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে
রাজার দোহাই দিয়ে
এ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি,
মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজি—
ঘাতক সৈন্যে ডাকি
‘মারো মারো’ ওঠে হাঁকি।
গর্জনে মিশে পূজামন্ত্রের স্বর—
মানবপুত্র তীব্র ব্যথায় কহেন, হে ঈশ্বর!
এ পানপাত্র নিদারুণ বিষে ভরা
দূরে ফেলে দাও, দূরে ফেলে দাও ত্বরা॥
১৫
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১৫
আলোকের পথে, প্রভু, দাও দ্বার খুলে—
আলোক-পিয়াসী যারা আছে আঁখি তুলে,
প্রদোষের ছায়াতলে হারায়েছে দিশা,
সমুখে আসিছে ঘিরে নিরাশার নিশা।
নিখিল ভুবনে তব যারা আত্মহারা
আঁধারের আবরণে খোঁজে ধ্রুবতারা,
তাহাদের দৃষ্টি আনো রূপের জগতে—
আলোকের পথে॥
১৬
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১৬
ওই মহামানব আসে।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে॥
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।
উদয়শিখরে জাগে ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’
নবজীবনের আশ্বাসে।
‘জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়’
মন্দ্রি-উঠিল মহাকাশে॥
১৭
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত
১৭
হে নূতন,
দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ॥
তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন
সূর্যের মতন।
রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।
ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়।
উদয়দিগন্তে শঙ্খ বাজে, মোর চিত্তমাঝে
চিরনূতনেরে দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ॥